শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানি নিউ লাইন ক্লোথিং লিমিটেডের কাছ থেকে ৪২৪ কোটি টাকার বেশি ঋণ আদায়ে নিলামের উদ্যোগ নিয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি। ঋণ খেলাপি হওয়ায় সম্প্রতি ব্যাংকটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সাউথইস্ট ব্যাংক নিউ লাইন ক্লোথিংয়ের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামের ঘোষণা দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানিটির কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪২৪.১২ কোটি টাকা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য আগ্রহী দরদাতাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। ব্যাংকটি তাদের পাওনা আদায়ের জন্য গাজীপুরের ১১২ শতাংশ জমি এবং একটি সাততলা ফ্যাক্টরি ভবন নিলামে তুলছে।

নিউ লাইন ক্লোথিংয়ের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মূলধনের তীব্র সংকটে ভুগছিল নিউ লাইন ক্লোথিং। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কারখানাটি বছরের পর বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের সঙ্গে নিউ লাইন ক্লোথিংয়ের ব্যাংকিং সম্পর্ক রয়েছে। তারা ব্যাংক থেকে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি উভয় ধরনের ঋণ নিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেও কোম্পানিটি আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ওই অর্থের কিছু অংশ সাউথইস্ট ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ এবং নতুন মেশিন কেনার জন্য ব্যবহার করার কথা ছিল। তালিকাভুক্তির সময় ব্যাংকটির কাছে নিউ লাইন ক্লোথিংয়ের ঋণের পরিমাণ ছিল ১২৩ কোটি টাকা।

কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা বাজারে তালিকাভুক্তির পরপরই খারাপ হতে শুরু করে। তারা ২০২২ সালের মার্চের পর থেকে আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছর-এর পর থেকে কোনো ডিভিডেন্ডও ঘোষণা করেনি। ওই অর্থবছরের ১২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে কোম্পানিটি সর্বশেষ ১২.২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর অনুমোদিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর একটি পরিদর্শক দল কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় এবং কারখানা বন্ধ দেখতে পায়। ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল যে কোম্পানিটি বাজারকে অবহিত না করেই কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

টানা তিন বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ডিএসই কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দিয়েছে। কোম্পানির শেয়ারের দরও তার পতনের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। আগস্ট ২০২৪-এ শেয়ারের মূল্য ছিল ৪৫ টাকা ৪০ পয়সা, যা সর্বশেষ লেনদেনে ৬ টাকার নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে এর বাজার মূলধন ৪৬ কোটি ৩৩ ললাখ টাকা, যেখানে পরিশোধিত মূলধন ৭৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডিং সংক্রান্ত কোনো তথ্যও হালনাগাদ করেনি। ওই সময়ে স্পন্সর ও পরিচালকদের কাছে ৩০.৬১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৮.৩৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫১.০৬ শতাংশ শেয়ার ছিল। হালনাগাদ তথ্যের অভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।