দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের সিইও নিয়োগ বাতিল
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ফৌজিয়া কামরুল তানিয়া। রূপালী ইন্স্যুরেন্স ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক পদে আসীন। এ তথ্য গোপন করে মেয়েকে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বানাতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবর আবেদন করেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।
অথচ বিমা আইন অনুযায়ী, কোনো মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা যদি অন্য কোনো বিমা কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিচালক, স্পন্সর বা বিমাকারীর ব্যবসায়িক স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন, তবে তিনি উক্ত পদে থাকার অযোগ্য হবেন। তবে এ ধরনের অপরাধ করলেও তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইডিআরএ।
অবশেষে দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার নিয়োগের প্রস্তাব বাতিল করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া তাদের পারিবারিক আরেক বিমা কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় পরস্পর যোগসাজশে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় সিইও আবেদন বাতিলে গত ১৭ আগস্ট বিমা কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আইডিআরএর চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সোনালী লাইফের আর্থিক কেলেঙ্কারি তদন্তে নিয়োগ পাওয়া নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৮৭ কোটি টাকার অনিয়মের প্রমাণ পায়। পরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) আলাদা তদন্তে কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান, সাত পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যোগসাজশে প্রায় ৩৫৩ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য উদঘাটন করে। ওই তালিকায় তৎকালীন পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার নামও রয়েছে।
তদন্তের ভিত্তিতে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ গত এপ্রিল মাসে বিমা আইন ২০১০-এর ধারা ৯৫ অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত হয়। এদিকে, বিএফআইইউর প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। দুদক এরই মধ্যে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
আইডিআরএ বলছে, বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ অনুযায়ী দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে অপসারিত ব্যক্তি এমডি পদে নিয়োগের যোগ্য নন। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব দেওয়া ন্যায়নীতির পরিপন্থি হবে।
সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিলে তা গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় বড় ঝুঁকি তৈরি করবে। তাই রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রস্তাবিত নিয়োগ আবেদন বাতিল করা হলো। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত সিইও ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া বলেন, একটু পরে জানাচ্ছি। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলেও কোনো জবাব দেননি।

