শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সাম্প্রতিককালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু গ্রুপের দুই কোম্পানির শেয়ারে তেজিভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তেজিভাবের গুঞ্জন নিয়ে কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে অতীতেও বড় কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। এবারের তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের সেই পুরোনো দগদগে ক্ষত ফের দৃশ্যমান করে তুলছে।

কোম্পানি দুটি হলো-মুন্নু এগ্রো এন্ড জেনারেল মেশিনারি ও মুন্নু সিরামিক। কোম্পানি দুটির মধ্যে মুন্নু এগ্রো এন্ড জেনারেল মেশিনারির পুরনো নাম ছিল মুন্নু জুট স্ট্যাপলার। ২০১৮ সালে মুন্নু জুট স্ট্যাপলারের শেয়ারদর ৪০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৬৫২ টাকায় তোলা হয়। এরপর বাজারে গুঞ্জন ছড়ানো হয়, শেয়ারটির দর সাত হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ হিসাবে বলা হয়, কোম্পানিটি ১টি শেয়ারের বিপরীতে ৫টি বোনাস শেয়ার ইস্যু ও অভিহিত মূল্যে ৫টি রাইট শেয়ার ইস্যু করবে। এতে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটির প্রতি হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর এই শেয়ারটির দর ৪৬৫২ টাকা ৭০ পয়সায় উঠে যায়। আর এই সুযোগে কারসাজিকারিরা শেয়ারটি চড়া দরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে ফেলে সটকে পড়ে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ৩৫০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দেয়। তারপর ধারাবাহিকভাবে শেয়ারটির দরে পতন নেমে আসে। এক পর্যায়ে ৫০০ টাকার নিচে শেয়ারটির দর নেমে যায়।

এরপর ২০২০ সালে ভালো ডিভিডেন্ড দেওয়ায় দর কিছুটা ওপরে উঠে। ২০২২ সালের শেয়ারটির দর ৪৫০ টাকার নিচে এসে স্থির হয়েছিল। তারপর শেয়ারটির দর ৮০০ টাকার ঘরে উঠে। তারপর আবারও পতন। চলতি বছরের মে মাসে মুন্নু এগ্রোর শেয়ার ৪৫০ টাকার নিচে লেনদেন হয়। সেখান থেকে ৬ মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ দরে তোলা হয়েছে।

একইভাবে মুন্নু সিরামিকের শেয়ারদরও নানা রকম গুঞ্জন ছড়িয়ে ২০১০ সালে ৪৫০ টাকার ওপরে উঠানো হয়েছিল। তারপর শেয়ারটির দর ১০০ টাকার ঘরে নেমে আসে। এই শেয়ারেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পথে বসে যায়। সেই দগদগে ঘা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। গত মে মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৯৪ টাকার নিচে লেনদেন হয়। এরমধ্যে ডিভিডেন্ড ও মুনাফায় কোনো অগ্রগতি না থাকলে শেয়ার নিয়ে চলছে কারসাজি।

এর আগে কোম্পানি দুটির শেয়ার কারসাজিতে মালিকপক্ষের একটি অংশের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি বড় আকারে আর্থিক জরিমানা করে। তারপর দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পর ফের কারসাজিতে লিপ্ত হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানিটির মালিকপক্ষ বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সামনে জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনে কোম্পানিটির মালিকপক্ষ বরাবরই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেজন্য নির্বাচনী খরচ যোগাতে উৎস হিসাবে শেয়ার দুটিকে বেচে নিয়েছেন।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মুন্নু গ্রুপের দুই শেয়ার এমনিতেই অতিমূল্যায়িত। বর্তমানে সর্বোচ্চ বিপদসীমায় রয়েছে। কোম্পানি দুটির মধ্যে মুন্নু এগ্রোর মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়িয়েছে ৩২০ পয়েন্টের ওপরে। আর মুন্নু সিরামিকের পিই রেশিও ৭৯৫ পয়েন্টে।

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মুন্নু গ্রুপের দুই কোম্পানিসহ যেসব কোম্পানির শেয়ারদর কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক বাড়ছে, সেসব শেয়ারের উপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা নজর রাখছে। শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে কোনোভাবেই পার পাওয়া যাবে না।