শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করতে চায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস। সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ বা ট্রেকহোল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে এ বিষয়ে আবেদন জানিয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা যাচাই করে নিবন্ধন সনদ দিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সুপারিশ করেছে ডিএসই।

তবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জাভেদ এ মতিন ঋণখেলাপি হওয়ায় সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংসের মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ প্রদানের কাজ স্থবির হয়ে গেছে। সম্প্রতি ডিএসইর কাছে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। একইসঙ্গে মোনার্ক হোল্ডিংসের পরিচালক জাভেদ এ মতিনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

তথ্য মতে, মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মোনার্ক হোল্ডিংসের পরিচালকদের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) ক্লিয়ারেন্স পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয় বিএসইসি।

ফলে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসের ‘মার্কেট মেকার’-এর লাইসেন্স পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ, লাইসেন্স দেয়ার সময় কাগজপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানতে পেরেছে মোনার্কের এক পরিচালক ঋণখেলাপি। সেই পরিচালক হলেন জাভেদ এ মতিন। তার খেলাপি ঋণের তথ্য জানার পর মোনার্ক হোল্ডিংসের মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ প্রদানের কাজ স্থবির হয়েছে।

বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করলেও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে চাননি কেউ। যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা তো আমার ডিপার্টমেন্টের নয়। এটা কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন স্যারের ডিপার্টমেন্ট। আপনি তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’ খেলাপি ঋণের তথ্য জানতে কমিশনার শামসুদ্দিনকে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

জাভেদ মতিনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। মোনার্কে তার ব্যবসায়িক অংশীদার আবুল খায়ের হিরুর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে কল কেটে দেন। পরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মোনার্ক হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন।

মোনার্ক হোল্ডিংস সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ। তারা মার্কেট মেকারের সনদ পেতে যে নিবন্ধন আবেদন করে, সেটি দেয়ার জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সুপারিশ করেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসই। তবে সম্প্রতি ডিএসইর কাছে বিএসইসি চিঠি দিয়ে তাদের অনুসন্ধানের কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি জাভেদ এ মতিনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বিএসইসির একজন কর্মকর্তা জানান, মোনার্কের আবেদনের পর তার পরিচালকদের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) ক্লিয়ারেন্স পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয় সংস্থাটি। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি থেকে জাভেদ মতিনের খেলাপি ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এরপরই প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ প্রদানের কাজ আটকে দেয়া হয়।

জানতে চাইলে মোনার্ক হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রথমে বিএসইসি জানিয়েছিল, পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২০ কোটি করতে হবে। এর এক সপ্তাহ পরেই জানাল আমাদের পরিচালক ঋণখেলাপি। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।

মার্কেট মেকার কারা: মার্কেট মেকার বলতে এমন একটি কোম্পানি বা ব্যক্তিকে বোঝায়, যারা একটি শেয়ারের বাজার তৈরি করে। তারা কোনো একটি শেয়ারের মজুত রাখে এবং সব সময় তাদের কাছে একটি দামে শেয়ারটি কেনা যায় ও একটি দামে শেয়ারটি বিক্রি করা যায়। এর ফলে পুঁজিবাজারে তারল্য তৈরি হয়।

পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়াতে মার্কেট মেকারের আইন করে বিএসইসি। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার মার্কেট মেকার হিসেবে নিবন্ধন সনদ পায় ডিএসই ও সিএসইর (চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস বি রিচ লিমিটেড। এরপর লাইসেন্স পায় গ্রিনডেল্টা সিকিউরিটিজ।

বাজার সৃষ্টিকারী বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার বিএসইসি থেকে এ সনদ পাওয়ার যোগ্য হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বাজার সৃষ্টিকারী) বিধিমালা অনুযায়ী, মার্কেট মেকার হওয়ার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদনসাপেক্ষে বিএসইসির কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আবেদন করবে।

একই সঙ্গে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা থাকতে হবে। আর উল্লিখিত পরিমাণ টাকা পরিশোধিত মূলধন হিসেবে থাকলে যেকোনো মার্কেট মেকার একটি অনুমোদিত সিকিউরিটিজ পরিচালনার জন্য নিয়োজিত থাকতে পারবে।

বাংলাদেশে একজন মার্কেট মেকার সর্বোচ্চ পাঁচটি শেয়ারের বাজার তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। একটি শেয়ারের বাজার তৈরি করতে ১০ কোটি টাকা পেইড-আপ লাগবে। সে হিসাবে ৫০ কোটি টাকা পেইড-আপ থাকলে পাঁচটি শেয়ারের মার্কেট তৈরি করা যাবে।