শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ার বাজার। চেক জমা সংক্রান্ত বিএসইসি’র সিদ্ধান্তের পর বিনিয়োগকারীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত এক মাসের ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আবারও সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চেক জমা দিয়েই শেয়ার কেনার সুযোগ পুনর্বহাল করায় নিষ্ক্রিয় অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় হয়েছেন।গত মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) চেক জমা দিয়েই শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল করে নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। এর আগে গত ১১ অক্টোবর চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার সুবিধা বাতিল করা হয়। বিএসইসি’র নির্দেশনার আলোকে ডিএসই এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছিল।

এদিকে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া শেষ তিন কার্যদিবসেই দেশের শেয়ার বাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। এতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে একশোর বেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে এক সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। যদিও গত কয়েক দিনের দরপতনের কারণে অধিকাংশ শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসে।

বিএসইসির নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট জমা দিয়ে দিনে দিনেই শেয়ার কেনার সুযোগ পাবেন। নতুন এ নির্দেশনার ফলে কয়েক দিন ধরে শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দেওয়া উৎকণ্ঠার অবসান হয়।

গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে সব কটি ব্রোকারেজ হাউসে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। সেখানে চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনার সুবিধা বাতিল করা হয়। এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় শেয়ার বাজারে।

বিনিয়োগকারীসহ ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা বাতিলের জন্য বিএসইসির ওপর চাপ তৈরি করা হয়। একদিকে শেয়ার বাজারের পতন, অপরদিকে বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসের চাপ দুইয়ে মিলে শেষ পর্যন্ত চেক জমা দিয়ে শেয়ার কেনার আগের সুবিধাটি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তবে এ জন্য নতুন করে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউসগুলোকেই এসব শর্ত পরিপালন করতে হবে।

বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক ও শেয়ার বাজারে লেনদেন চলাকালীন চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট জমা দিয়ে ওই দিনই শেয়ার কেনার সুযোগ পাবেন। বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে কম। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ১২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৬টির। আর ২২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। তবে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ১২ দশমিক ৮২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৫২ শতাংশ।

গত সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমেছে ১ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট।

বাজারের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৭৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় মোট ৩ হাজার ৫৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৮৮৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪০৪ কোটি ৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।