শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ঋণ প্রদান, গ্রহণ, আদায় ও ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নিরীক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএসইসি। ওই বৈঠকের জন্য কোম্পানিটির কাছে বর্তমান আর্থিক অবস্থার প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে কমিশন।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের সভাকক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পুরো পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং ২০১৫ সাল থেকে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করা নিরীক্ষকদের উক্ত সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) এর অধীনে উল্লেখিত বিষয়ে কমিশনের কাছে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

যেসব নথিপত্র চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- চলতি বছরের ১৫ মার্চ ও ২৫ এপ্রিল বিএসইসি থেকে পাঠানো চিঠি অনুযায়ী কোম্পানির প্রকাশিত তথ্যের বিস্তারিত। এছাড়া বিভিন্ন ঋণ গ্রহণের তারিখ, অনুমোদনকারীর নাম ও সে সংক্রান্ত নথিপত্র। সেই সঙ্গে মালিক, বোর্ড সদস্য, ব্যবস্থাপনা‌‌ পরিচালক এবং চেয়ারম্যানের ঋণগ্রহণ এবং খেলাপি হওয়া ঋণের চিঠি। পাশাপাশি মূল ঋণ, সুদ এবং বকেয়া ঋণের সঙ্গে খেলাপি হওয়ার তারিখসহ ঋণগ্রহীতাদের তালিকা।

একইভাবে ঋণগ্রহীতাদের তালিকা ও তাদের ঋণের পরিমাণ, যা ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বকেয়া আছে। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক এবং বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিস্তারিত। ২০১০ সাল এবং তার পর থেকে কোম্পানির বোর্ড সদস্যদের তালিকা ও মূল ব্যবস্থাপনা কর্মী এবং কর্পোরেট প্রধানদের তালিকা। এছাড়া সমস্ত নিরীক্ষক, নিরীক্ষা ফার্ম, যারা অংশীদার রয়েছে এবং গত ১০ বছরের জন্য অডিট কমিটির সদস্যদের বছরভিত্তিক তালিকার নথিপত্র চেয়েছে কমিশন।

তথ্য মতে, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার)। দখল করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস অন্যতম। কোম্পানিটির প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণই খেলাপি। খেলাপি হওয়া এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানতও নেই।

তাই জামানতের সম্পদ বিক্রি না করে কোম্পানিগুলো পুনর্গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাংক বহির্ভূত এ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। পি কে হালদারের চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পাওনা ২৬০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে তাদের বন্ধকি সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য মাত্র ৩৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে অনেকগুলো কোম্পানির পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। চলতি বছরের গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এমন তথ্য জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস তালিকাভুক্ত হয় ২০০৭ সালে। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ২২১ কোটি ৮১ লাখ ১০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২২ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ২৪৬টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৪১.৫৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.৭০ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৩.৭৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।