শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বিনিয়োগকারীদের হিসাবে চেক দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না, ‘চেক নগদায়ন হওয়ার পর শেয়ার কেনা যাবে’ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এমন নির্দেশনার পর শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত রয়েছে। বাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণে বিনিয়োগকারী এবং স্টক ব্রোকারদের মধ্যে নতুন করে হতাশা ঘনীভূত হতে শুরু করেছে।

‘চেক নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না’ নির্দেশনাটি গত ১১ অক্টোবর জারি করা হয়। এরপরের দিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৫ পয়েন্ট বাড়লেও পরের চার দিনেই কমেছে। এ চার দিনে সূচক কমেছে ১০০ পয়েন্ট। এর মধ্যে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সূচক কমেছে ১৫ পয়েন্ট এবং দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার ৬৫ পয়েন্ট। আজও কমেছে ১২ পয়েন্ট। তবে আজ একপর্যায়ে সূচকের পতন ৩০ পয়েন্টেও পৌঁছতে দেখা যায়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে কোনো বিনিয়োগকারী চেক দিলে, সেই চেকের বিপরীতে শেয়ার কেনা যেত। এতে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ত। পাশাপাশি শেয়ারের ডিমান্ড এবং সাপ্লাইও বাড়ত। কিন্তু বিএসইসির বর্তমান নিয়মের কারণে বাজারে লেনদেনের পাশাপাশি ডিমান্ড এবং সাপ্লাই কমে গেছে। যার প্রভাব শেয়ারবাজারে বড় আকারে পড়েছে। আর এ চাপ দিনকে দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চেক নগদ করতে যে সময় লাগে তাতে করে ওই চেকের অর্থের পরিমাণ শেয়ার কিনতে এক-দুই দিন সময় লেগে যায়। এখন চাইলেই কোনো বিনিয়োগকারী চেক দিয়ে শেয়ারে এন্ট্রি নিতে পারেন না। চেক নগদায়ন হওয়ার পর অর্থাৎ এক-দুই দিন পর বিনিয়োগকারী যে শেয়ার কিনতে চেয়েছিলেন, সে শেয়ার কিনতে পারেন। কিন্তু এক-দুই দিন পর সে শেয়ার তার কাছে বিনিয়োগ উপযোগী নাও মনে করতে পারেন। যে কারণে চেক ইস্যুটি বাজারে এখন বড় আকারে প্রভাব ফেলেছে।

এর আগে নগদ অর্থ লেনদেন না করার নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। এবার চেক দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না, এমন নির্দেশনা দিল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে বাজারের লেনদেনে বড় প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন ব্রোকারেজ হাউস সংশ্লিষ্টরা। বিএসইসির নির্দেশনাটি প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যে ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনসহ কয়েকটি সংগঠন বিএসইসি ও ডিএসই বরাবরে চিঠি প্রেরণ করেছে।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব সদস্যদের কাছে নগদ চেকে শেয়ার লেনদেনের বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনাটি নতুন নয় বলে জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, এটি নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নয়।

আগের সিদ্ধান্তটি বিএসইসি আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে নির্দেশনাটির কারণে পুঁজিবাজারের গতি অনেক কমে গেছে। যে বাজারে কিছুদিন আগেও দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে, সে বাজারে এখন টেনেটুনে হাজার কোটিতে আটকে গেছে।

এদিকে বাজারে স্বাভাবিক গতি না থাকায় দুর্বল ও অখ্যাত কোম্পানির দাপট বেড়ে গেছে। এসব কোম্পানি মৌলভিত্তির ও বনেদি শেয়ারের স্থান দখল করেছে। যে কারণে প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকা এবং লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় জোট বেঁধে উঠে আসছে দুর্বল ও অখ্যাত কোম্পানির শেয়ার। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাজারের জন্য কোনোভাবেই বাঞ্ছিত নয়।