শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) যৌথ উদ্যোগে আজ দেশের পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো ২৫০টি সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। যার বাজার মূলধন তিন লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় দেশের দুই শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একসঙ্গে লেনদেন শুরু হয়েছে।

এর ফলে দেশের জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদানও এক ধাক্কায় ১৪ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রথম দিন লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টায় অর্থাৎ সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময়ে কোনো বন্ডের কেনাবেচা হয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি বন্ড শেয়ারবাজারে লেনদেন নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা বন্ড কেনাবেচা করতে পারবেন। যা পুঁজিবাজারে ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়। ডিএসইতে বন্ডগুলোর লেনদেনের ফলে এর বাজার মূলধন পাঁচ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে আট লাখ ৩৮ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান ১৩-১৪ থেকে শতাংশ বেড়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ড লেনদেনের বিষয়ে এর আগে বিএসইসির এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, শেয়ারবাজারের দুটি পার্ট। এর মধ্যে একটি ইক্যুইটি মার্কেট, আরেকটি ডেপথ মার্কেট। ইক্যুইটি মার্কেটই হলো শেয়ার মার্কেট। বাংলাদেশে এই শেয়ার মার্কেটই উন্নয়ন করেছে।

শেয়ার মার্কেটের আরেকটা অংশ যেটা আসলে বড় হওয়া উচিত সেটা হলো বন্ড মার্কেট। সেটা কিন্তু খুব বেশি গড়ে ওঠেনি। সে কারণে সেকেন্ডারি মার্কেট আসলে ততটা ভালো কাজ করছে না। বন্ড মার্কেটকে বড় করতে যে সাপোর্ট দরকার সেটা গভর্নর হওয়ার পর বেশি অনুভব করলাম।

গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, আমাদের অনেক ব্যাংক টায়ার-২ বন্ড ইস্যু করছে। সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। আমি যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রেন্ড ছিল এক ব্যাংক বন্ড ইস্যু করলে আরেক ব্যাংককে তা নিতে হতো। আমি যোগ দেওয়ার পর নিয়ম করে দিয়েছি ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড বাইরে বিক্রি করতে হবে। ব্যাংকের বন্ড তো সব সিকিউরড বন্ড। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক ফল্ট করেনি।

আগামী ৫০ বছরেও ফল্ট করবে না বলে আমি মনে করি। তাহলে সব বন্ড সিকিউরড। তারা কেন মার্কেটে আসবে না। সেটা কেন সাধারণ মানুষ কিনবে না। আমার কাছে এখন পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয়টি ব্যাংক এসেছে। সবাইকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি যে ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড ক্যাপিটাল মার্কেটে ইস্যু করতে হবে। আমরা শেয়ারবাজারে বন্ডগুলোকে বড় করার চেষ্টা করছি।

এদিকে উদ্যোগটি পুঁজিবাজারে জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তারা বন্ড ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবেন। এতে ব্যাংকের ওপর ঋণের চাপ কমবে।

ট্রেজারি বন্ড হলো সরকারি বিল বা বন্ড, যার মেয়াদ ন্যূনতম দুই বছর থেকে ২০ বছর। এই বন্ডের মাধ্যমে সরকার শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। এখানে বিনিয়োগ করলে টাকা হারানোর কোনো ঝুঁকি থাকবে না। বরং বছরে ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদ বা মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি পাবেন কর রেয়াত।

এতদিন এই বন্ড বিনিয়োগকারীরা কেনাবেচা করতে পারতেন না পুঁজিবাজারে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে কেনাবেচা হতো। জনপ্রিয়তাও ছিল না। বন্ড মার্কেটে যাতে সব বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে শেয়ারবাজারে এর লেনদেন শুরু হচ্ছে।

‘এ’ ক্যাটাগরিতে শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে বন্ডগুলো। ট্রেজারি বন্ডে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। তার জন্য নতুন করে কোনো বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না।

তবে বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ বন্ডের ইউনিটের ফেসভ্যালু হবে ১০০ টাকা। লট হবে দশ হাজারটি। সরকারি ট্রেজারি বন্ডগুলোর মেয়াদ হবে যথাক্রম ২ বছর, ৫ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর এবং ২০ বছর।