শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি বিডিকম অনলাইনের শেয়ার কারসাজিতে শাস্তি প্রদান করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় কারসাজিকাররা আগের চেয়ে আরও বেশি কারসাজিতে সক্রিয় হয়েছে। যাতে আগের চেয়ে অনেক বেশি মুনাফা করার লক্ষ্যে শেয়ারটিকে আরও বেশিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মুলত কারসাজিতে জরিমানার পরও থেমে নেই বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দর বৃদ্ধি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। চলতি বছরের মার্চ থেকে তা অব্যাহত রয়েছে। গত ৭ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম ২৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সা হয়। শতাংশের হিসাবে যা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি।

যে কারণে ডিআইটি কো-অপারেটিভকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ধারা ১৭ অনুসারে হিরো ও তার বাবা এবং সহযোগীদের ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

কিন্তু এই কারসাজি ও জরিমানার পরও থেমে নেই কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি। ৩৪ টাকা ৩০ পয়সায় কোম্পানিটির শেয়ারে কারাসজির কারণে যে জরিমানা করা হয়েছিল, সে শেয়ার গত ২৫ সেপ্টেম্বর এসে দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকায়।

তাই কোম্পানিটির শেয়ারে এখনও কারসাজি চলছে ওপেন সিক্রেট। তাই এ বিষয়ে বিএসইসির আরও কঠোর নজরদারি ও কারসাজিকারীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কোম্পানিটির শেয়ারদর ও লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৬ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২৩ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর টানা উত্থানের মাধ্যমে শেয়ারটির দর ১৫ মার্চ দাঁড়ায় ৪৫ টাকা ৫০ পয়সায়। মাত্র ৯ দিনে শেয়ারটির দর কারসাজি করে বাড়ানো হয় ২১ টাকা ৯০ পয়সা বা ৯২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এর পর শেয়ারটির দর আবার কিছুটা কমা ও বৃদ্ধির মাধ্যমে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা।

এ বিষয়ে কোম্পানিটির সচিব একেএম কুতুব উদ্দিন বলেন, আমাদের কোম্পানির শেয়ারদর ও লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) নেই। এ বিষয়ে কয়েকদিন আগে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) জানানো হয়েছে। এর দুদিন পরই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকেও জানতে চাওয়া হলে একই তথ্য জানানো হয়।

তা হলে কেন দর বাড়ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় এর আগে বিএসইসি জরিমানা করেছে। ঠিক একইভাবে বা অন্য কোনোভাবে যদি এখনও কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলে তাহলে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চান তিনি। কারসাজিকারী যেই হোক না কেন, শেয়ার নিয়ে কারসাজি যাতে বন্ধ হয় এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচেন সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, বিডিকম অনলাইনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে তা ওপেন সিক্রেট। কারা কারসাজি করছে ডিএসই বিএসইসি সবাই জানে। এর আগেও এর শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় জরিমানা করা হয়েছে। মুলত বিডিকমের শেয়ার কারসাজিতে শাস্তি প্রদানের পরে শেয়ারটি নিয়ে আরও বেশি আগ্রাসি হয় কারসাজিকারেরা। এর মাধ্যমে তারা এক প্রকার বিএসইসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। যার পেছনে মুনাফার থেকে বিএসইসির কম শাস্তি প্রদান অন্যতম কারন হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি মনে করেন।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিডিকম অনলাইনের শেয়ার কোনো কারণ ছাড়া ৯ কার্যদিবসে দ্বিগুন বেড়ে যাওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। একমাত্র ‘কারসাজি’র মাধ্যমেই এটি সম্ভব। বিএসইসি তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে কারা কারসাজি করছে। কিন্তু কারসাজি বন্ধে কমিশনের আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। তা না হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে বাজারে গুঞ্জন রয়েছে সাম্প্রতিক আলোচিত ও নানা শেয়ারে কারসাজির মুল হোতা বিডিকমের শেয়ার নিয়ে এবার কারসাজিতে মেতে উঠছে তিনি। তিনি যে পরিমান জরিমানা দিয়েছেন তার কয়েক গুন বেশি কারসাজি করে আয় করবেন বলে নানা বাহবা দিচ্ছেন।