শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৫৮। এর মধ্যে ১৬টি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা নড়বড়ে। এদের মধ্যে ১১টি কোম্পানি সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিক পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে।

লোকসানের কারণে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশে বিনিয়োগকারীরা তেমন আশাবাদী হতে পারছেন না। বাকি ৫টি কোম্পানি সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের কোনো প্রান্তিকেরই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কয়েকটি গত তিন-চার বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

তবে কোম্পানিগুলোর কোনোটিরই সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। যে কারণে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের ওপরও বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারছেন না। আর্থিক নড়বড়ে ১৬ কোম্পানি হলো: সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, আনলিমা ইয়ার্ন, ডেল্টা স্পিনার্স, দুলামিয়া কটন, ইভিন্স টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, মিথুন নিটিং, নূরানি ডাইং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, রিং শাইন টেক্সটাইল, আরএন স্পিনিং, স্টাইলক্রাপ্ট, তাল্লু স্পিনিং, তুংহাই নিটিং, জাহিন স্পিনিং ও জাহিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত বছর আনলিমা ইয়ার্ন, ডেল্টা স্পিনার্স ও ইভিন্স টেক্সটাইল বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছিল। সে বছর কোম্পানিগুলো মুনাফায় ছিল। কিন্তু সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিগুলো লোকসানে নেমেছে। যে কারণে এ বছর এই তিন কোম্পানির লভ্যাংশ নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মনে শঙ্কা জন্মেছে।

আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা লোকসানি ১১ কোম্পানির মধ্যে সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে তথা ৯ মাসে (জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত) আনলিমা ইয়ার্নের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩৪ পয়সা, ডেল্টা স্পিনার্সের শূন্য ৪ পয়সা, দুলামিয়া কটনের ৬৫ পয়সা, ইভিন্স টেক্সটাইলের ৩৫ পয়সা, নূরানী ডাইংয়ের ৯৫ পয়সা, আরএন স্পিনিংয়ের শূন্য ৮ পয়সা, স্টাইলক্রাপ্টের ৪ টাকা ৮৬ পয়সা, তাল্লু স্পিনিংয়ের ১ টাকা ৪৭ পয়সা, তুংহাই নিটিংয়ের ২১ পয়সা, জাহিন স্পিনিংয়ের ৫৫ পয়সা ও জাহিন টেক্সটাইলের শেয়ারপ্রতি লোকসান ২ টাকা ২৪ পয়সা।

আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা পাঁচ কোম্পানির মধ্যে মিথুন নিটিং সর্বশেষ ২০১৯ সালে জানিয়েছে, কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। এরপর কোম্পানিটি বন্ধ থাকায় এর লোকসান অপরিবর্তিত রয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে।

মিথুন নিটিং ২০১৭ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। দেনার দায়ে কোম্পানিটির যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম চট্টগ্রামের বেপজা এরই মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের না জানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু কোম্পানিটি এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল গত আগস্টের মাঝামাঝি আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এখন কোম্পানিটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফেরার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৬ সালের পর বিনিয়োগকারীদের আর্থিক প্রতিবেদন জানানো থেকে বিরত রয়েছে এবং লভ্যাংশ থেকেও বঞ্চিত করছে।

তবে দীর্ঘদিন পরে হলেও কোম্পানিটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফেরার খবরে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও আশাবাদী হচ্ছেন। যদিও সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে বড় লোকসানে থাকা কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের এ বছর কোনোভাবেই লভ্যাংশ দিতে সক্ষম হবে না।

একসময় মুনাফা ও লভ্যাংশে ঝলক দেখানো ফ্যামিলি টেক্সটাইল ২০১৯ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের মুখ দেখায়নি। কোম্পানিটি ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের আর্থিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ পয়সা। এর পর থেকে আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিএসইসি গত বছর রিংশাইন টেক্সটাইলের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ বসিয়েছে। নতুন পর্ষদ গত বছরের জুন মাসে কোম্পানিটির ২৫ শতাংশ উৎপাদন শুরু করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। তারপর আর কোনো অগ্রগতি বিনিয়োগকারীদের জানায়নি।

রিজেন্ট টেক্সটাইল ২০২০ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মোটামুটি লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার পর থেকেই কোম্পানিটি লভ্যাংশ না দেওয়ার তালিকায় নাম লেখিয়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ১ শতাংশ নগদ ও ১ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর ২০১৯ সালে বোনাস, ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ বোনাস ও ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

কিন্তু ২০২১ সালে কোম্পানিটি মুনাফা থেকে লোকসানে চলে যায়। ওই বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১ টাকা ৫২ পয়সা। ফলে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এর পর থেকে কোম্পানিটি আর্থিক পারফরম্যান্স থেকেও বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রেখেছে।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা ১১ কোম্পানির মধ্যে আনলিমা ইয়ার্নের পরিশোধিত মূলধন ১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা, ডেল্টা স্পিনার্সের পরিশোধিত মূলধন ১৬৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ৫১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, দুলামিয়া কটনের পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ঋণাত্মক ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ইভিন্স টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ১৮২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

নূরানী ডাইংয়ের পরিশোধিত মূলধন ১২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা, আরএন স্পিনিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ৩৯২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ঋণাত্মক ৪৪৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, স্টাইলক্রাপ্টের পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা,

তুংহাই নিটিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ১০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ঋণাত্মক ১৬৮ কোটি ০৫ লাখ টাকা, জাহিন স্পিনিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ১১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ঋণাত্মক ৪২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং জাহিন টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।