শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দীর্ঘ দেড় বছর পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স থেকে প্রশাসক প্রত্যাহার হচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই কোম্পানিটি থেকে প্রশাসক প্রত্যাহার করা হতে পারে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন সমঝোতার মাধ্যমে গঠিত নতুন পর্ষদ। এই পর্ষদের অধিনেই আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করা হবে। যাতে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ পাওয়ার রাস্তা খুলে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আদালতের আদেশের সার্টিফাইট কপি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে পৌঁছানো হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইডিআরএ-কে চিঠি দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। সেই সঙ্গে আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে গত দেড় বছরে তিন দফায় প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে আছেন আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য কুদ্দুস খান।

অবশ্য প্রশাসক নিয়োগের আগেই আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ তোলে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন।

এরপর গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেও একই অভিযোগ করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা লাইফের সাবেক সিইও আদিবা রহমান। ডেল্টা লাইফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করার এক সপ্তাহের মাথায় ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।

ডেল্টা লাইফ নিয়ে জড়ানো বিতর্কের জেরে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে হয়েছে এম মোশাররফ হোসেনকে। ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল আইডিআরএ সদস্য (লাইফ) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মোশাররফকে ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিন বছরের জন্য সংস্থাটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সে হিসাবে ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে এক বছর আগেই চলতি বছরের ১৫ জুন তিনি পদত্যাগ করেন।

মোশাররফ পদত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে ওই দিনই আইডিআর ‘র নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারীকে নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর জুলাই মাসে আইডিআরএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সমাঝোতার মধ্য দিয়ে প্রশাসক প্রত্যাহার ও নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

ওই বৈঠকে আইডিআরএ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনসহ কোম্পানি পরিচালনায় ১০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে মামলা থাকায় ডেল্টা লাইফের প্রশাসক প্রত্যাহারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের সার্টিফাইট কপির প্রয়োজন পড়ে। যে কারণে জুলাইতে সমঝোতার মাধ্যমে প্রশাসক প্রত্যাহার ও নতুন পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। অবশ্য এখন আদালতের সার্টিফাইট কপি পাওয়ায় এ সংক্রান্ত সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে গেছে। এখন আইডিআরএ থেকে নির্দেশনা দিয়েই প্রশাসক প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেল্টা লাইফের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে হাফিজ আহমেদ মজুমদার এবং ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক জুনায়েদ শফিক দায়িত্ব পাবেন। পরিচালনা পর্ষদে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পর্যবেক্ষক হিসেবে মন্ত্রণালয়ের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি (যুগ্নসচিবের নিম্নে নয়) থাকবেন।

এছাড়া পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন ডেল্টা লাইফের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান, ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদে থাকা সুরাইয়া রহমান ও জেয়াদ রহমান। এদের পাশাপাশি সাকিব আজিজ চৌধুরী, চাকলাদার রেজানুল আলম এবং সাকিব আজাদ কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন।

ডেল্টা লাইফের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০১৯ সালের এজিএম করার বিষয়ে আদালতের রায় রয়েছে। নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই এজিএম অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ সালের সবকিছুই প্রস্তুত আছে। এছাড়া ২০২০ এবং ২০২১ সালের এজিএম বাকি রয়েছে। এই দুই বছরের এজিএমও দ্রুত সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে গেছে।

যদি সম্ভব হয় তিন বছরের এজিএম ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে করার চেষ্টা করা হবে। আর যদি সেটা না হয় তাহলে ২০১৯ সালের এজিএম হয়ে যাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে পরবর্তী দুই বছরের (২০২০, ২০২১) এজিএম সম্পন্ন করা হবে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, এজিএম না হওয়ার কারণে ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালের পলিসি বোনাস পাননি পলিসিহোল্ডাররা। আর শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হয়েছেন লভ্যাংশ পাওয়া থেকে। ২০১৯ সালের এজিএম সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলিসিহোল্ডার এবং শেয়ারহোল্ডাররা তাদের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ পাবেন।

তবে যেসব পলিসিহোল্ডাররা পলিসির মেয়াদ শেষে ইতোমধ্যে টাকা তুলে নিয়েছেন, তারা এই লভ্যাংশ পাবেন কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অবশ্য যাদের পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনো দাবির টাকা তুলে নেননি, তারা যে হারে পলিসি বোনাস ঘোষণা করবেন, সেই হারে লভ্যাংশ বা মুনাফা পাবেন।