শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার থেকে ঝড়ে পড়া, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা এমন ব্যর্থ কিছু কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এসএসই মার্কেট। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে স্বল্প মূলধনী কিছু নতুন কোম্পানি। সব মিলিয়ে বর্তমানে এই বাজারে মোট কোম্পানির সংখ্যা ১৪টি। যাদের প্রতিদিনই বাড়ছে শেয়ারদর। বিষয়টি মুল মার্কেটের সাথে সাংঘর্ষিক। মূল মার্কেটে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা থাকছে না। অন্যদিকে, এসএমইতে থাকা পঁচা, দূর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে চলছে ধুমছে জুয়া খেলা।

দেশের পুঁজিবাজারে স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্মের বিনিয়োগ সীমা কমানোর পর থেকেই মূল মার্কেটে চলছে অব্যাহত দরপতন। সেই সাথে এসএমই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর যেন সোনার হরিন। গত কয়েক মাস ধরে টানা শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলছে। অথচ মুল মার্কেট ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে। মূল মার্কেটে টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে ফেলছেন। ফলে এসএমই মার্কেটের এ অস্বাভাবিক উত্থানকে ক্যাসিনো হার মানিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেন।

এছাড়া পুঁজিবাজারে অস্থিরতা ও টানা দরপতনের জন্য এসএমই মার্কেট দায়ী। কারণ মূল মার্কেটের জুয়ারি চক্রটি এসএমকে মার্কেটে ক্যাসিনো মার্কেট তৈরি করছেন বলে একাধিক বিশ্লেষকরা অভিযোগ করেন। আর এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা। মাত্র আড়াই ব্যবধানে এমএমই মার্কেটের কোন কোন শেয়ারের দাম ৮ গুন বাড়িয়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিজেদের শেয়ার নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। এসএমই মার্কেটের বিষয়টি বর্তমান কমিশনের সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

মুলত চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এসএমই প্লাটফর্মে বিনিয়োগের শর্ত শিথিল করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। আর শর্ত শিথিলের পর থেকে মুল মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতো পারছে না। সেসময় এক নির্দেশনায় বলা হয়, এসএমই মার্কেটে আসার জন্য পুঁজিবাজারে ২০ লাখ টাকার বিনিয়োগ লাগবে। এর আগে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলে এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন করার সুযোগ পেতেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, এসএমই মার্কেট বন্ধ করে মুল মার্কেট চাঙা করার দাবি করেন তিনি। কারন এসএমই মার্কেটের শেয়ার নিয়ে পুঁজিবাজারে ক্যাসিনো কান্ড চলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গুলো এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছে। গত ১০ মা ধরে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নি:স্ব হতে চলছে। অথচ মুল মার্কেট স্বাভাবিক করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তেমন কোন ভুমিকা চোখে পড়ছে না।

তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্বের পুঁজিবাজার যে ভাবে পরিচালিত হয়, আমাদের পুঁজিবাজারকে সে ভাবে পরিচালিত করা উচিত। কারণ কারিসাজি অপরাধে ভারতের সাহারা গ্রুপের মলিক সুব্রতের মতো পুঁজিবাজার লুন্ঠনকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক। তা না হলে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হবেনা। বর্তমান পুঁজিবাজারে কারসাজি চক্রদের দাপটে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাতে শুরু করছেন।

এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, এসএমই মার্কেট একটি জুয়ার বাজার। এ বাজারের উদ্দেশ্য ছিল স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি। কিন্তু এটা না করে ওটিসির মৃতপ্রায় কোম্পানিগুলোকে এ মার্কেটে পুর্নবাসন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মূল মার্কেটের সাথে এ মার্কেটের সংশ্লিষ্টতা রাখা ঠিক নয়। কারণ এসএমই মার্কেটে বেশির ভাগই বা ৯০ শতাংশই জুয়ারিদের আড্ডা খানা। এই মার্কেটে মূল মার্কেটের টাকা চলে যাচ্ছে। আর সেই টাকা নিয়ে জুয়া খেলছে বিনিয়োগকারী নামের কিছু জুয়ারি। এতে করে মূল মার্কেট তার গতি হারাচ্ছে।

মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশিকুর রহমান বলেন, এসএমই মার্কেটে খুবই অল্প সংখ্যক বিনিয়োগকারী লেনদেন করে থাকেন। সংখ্যাটা এতো কম যে এটা মূল মার্কেটের লেনদেনে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, যেহেতু এ বাজারে স্বল্পসংখ্যক বিনিয়োগকারী লেনদেন করে থাকেন সেহেতু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং ডিএসই কর্তৃপক্ষের উচিত সার্কুলার ট্রেডের মাধ্যমে কারসাজি হচ্ছে কি না এ ব্যাপারে সচেতন থাকা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, এসএমই মার্কেটের এ উত্থান মূল মার্কেটে কোন প্রভাব বিস্তার করছে কি না এ সংশ্লিষ্ট কোন রিসার্চ আমাদের নেই। তবে এ বাজারে যদি কোন কারসাজি হয়ে থাকে তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অবশ্যই পদক্ষেপ নিবে।

নিন্মে এসএমই মার্কেটের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরা হলো:

স্টার অ্যাডহেসিভ সর্বনিন্ম দর ১১ সর্বোচ্চ দর ৭১.৫০ যা ৬০.৫০ টাকা বা ৫৫০ শতাংশ বেড়েছে।

বিডি পেইন্টস সর্বনিন্ম দর ১১ টাকা সর্বোচ্চ দর ৫২.৮০ টাকা যা ৪১.৮০ টাকা বা ৩৮০ শতাংশ বেড়েছে।

নিয়ালকো সর্বনিন্ম দর ১৪.৪০ টাকা সর্বোচ্চ দর ৫২.৮০ টাকা যা ৩৮.৪০ টাকা বা ২৬৬ শতাংশ বেড়েছে।

কৃষিবিদ সীড সর্বনিন্ম দর ১১ টাকা সর্বোচ্চ দর ৩৭.৩০ টাকা যা ২৬.৩০ টাকা বা ২৩৯ শতাংশ বেড়েছে।

কৃষিবিদ ফিড সর্বনিন্ম দর ১০ টাকা সর্বোচ্চ দর ৩২.১০ টাকা যা ২২.১০ টাকা বা ২২১ শতাংশ বেড়েছে।

মামুন এগ্রো সর্বনিন্ম দর ১১ টাকা সর্বোচ্চ দর ৩১ টাকা যা ২১ টাকা বা ১৯০.৯০ শতাংশ বেড়েছে।

মোস্তফা মেটাল সর্বনিন্ম দর ১২ টাকা সর্বোচ্চ দর ৩৪.৫০ টাকা যা ২২.৫০ টাকা বা ১৮৭.৫০ শতাংশ বেড়েছে।

এপেক্স ওয়েভিং সর্বনিন্ম দর ১৪.৪০ টাকা সর্বোচ্চ দর ৩৮.৬০ টাকা যা ২৪.২০ টাকা বা ১৬৮ শতাংশ বেড়েছে।

ওয়াল্ডল্যান্ড টয়েস সর্বনিন্ম দর ১৯.৯০ টাকা সর্বোচ্চ দর ৫২.২০ টাকা যা ৩২.৩০ টাকা বা ১৬২.৩১ শতাংশ বেড়েছে।

ওরিজা এগ্রো সর্বনিন্ম দর ১২ টাকা সর্বোচ্চ দর ২৯.৪০ টাকা যা ১৭.৪০ টাকা বা ১৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

মাস্টার এগ্রো সর্বনিন্ম দর ১২ টাকা সর্বোচ্চ দর ২৮.২০ টাকা যা ১৬.২০ টাকা বা ১৩৫ শতাংশ বেড়েছে।

বেঙ্গল বিস্কুট সর্বনিন্ম দর ১১১ টাকা সর্বোচ্চ দর ১৪৯.১০ টাকা যা ৩৮.১০ টাকা বা ৩৪.৩২ শতাংশ বেড়েছে।

আছিয়া সী ফুড সর্বনিন্ম দর ১১ টাকা সর্বোচ্চ দর ১৪.৬০ টাকা যা ৩.৬০ টাকা বা ৩২.৭২ শতাংশ বেড়েছে।