শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সহায়তা দিতে দেশের শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িতদের শাস্তি চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এছাড়াও সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করা ও কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প গ্রহণে আরও বেশি জোর দিতে বলেছে সংস্থাটি। আর ঋণের শর্ত সহজ এবং সুদহারের বিষয়ে নমনীয় হতে আইএমএফকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।

গতকাল রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইএমএফের সফররত প্রতিনিধিদল তিনটি আলাদা বৈঠক করেছে। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে, অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরীর সঙ্গে বাজেট সহায়তা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সঙ্গে সরকারি ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমাতে বাংলাদেশকে আগামী কয়েক বছরে ৬৮০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব করেছে আইএমএফ। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০২২) ঘাটতি ছিল মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেয়ারবাজারের উন্নয়নের সুপারিশও করা হয়েছে। বাজার কারসাজিতে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ারও প্রস্তাব করেছে আইএমএফ। এছাড়াও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আইএমএফ পরামর্শ দিয়েছে। ব্যাংক খাতের তদারকি শক্তিশালী করার পাশাপাশি করপোরেট সুশাসন উন্নত করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যাংক খাতে বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে আইনি সংস্কারের পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ। বৈঠকে খেলাপি ঋণের হিসাব পদ্ধতি সংশোধন ও খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করার বিষয়টি নিয়ে কথা তুলেছে আইএমএফ। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সূচকের অবনতিতে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে সংস্থাটির।

বাজেট সহায়তার ওপর সর্বোচ্চ জোর দেয় আইএমএফ : কভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং ডলারের সংকট মেটাতে আইএমএফের কাছে চলতি অর্থবছরের বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে অর্থ বিভাগ। বৈঠকে অর্থ বিভাগ বলেছে, ব্যালান্স অব পেমেন্টে সহায়তা হিসেবেও এ ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঋণের ব্যাপারে রাজি থাকলেও তা হবে দরকষাকষি ও শর্তসাপেক্ষ। সহজ শর্ত এবং সুদহারের বিষয়ে নমনীয় হওয়ার ব্যাপারে আইএমএফকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।

সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে বৈঠক : চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কীভাবে চাপে পড়েছে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি এ চাপ থেকে উত্তরণে সরকারের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতির ব্যাপারেও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেছে বৈঠকে।

করোনা মহামারী মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো অবস্থায় থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। তবে দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প গ্রহণে আরও বেশি জোর দিতে বলেছে সংস্থাটি। আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশের সামনে এই মুহূর্তে তিনটি বড় ধরনের ঝুঁকি আছে।

এগুলো হলো করোনার অনিশ্চিত গতিপথ ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ। এ কারণে শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, আধুনিক নীতি কাঠামো ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে বলেছে আইএমএফ। এছাড়া আর্থিক খাত সংস্কার এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর কথা বলেছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ খায়েরুজ্জামান মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, সংস্থাটি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা চলমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও যে দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে তা তাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।