শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে এসএমই মার্কেটর শেয়ার যেন সোনার হরিন। গত কয়েক মাস ধরে টানা শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলছে। অথচ মুল মার্কেট ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে। মূল মার্কেটে টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে ফেলছেন। ফলে এসএমই মার্কেটের এ অস্বাভাবিক উত্থানকে ক্যাসিনো হার মানিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেন।

মূল মার্কেটের জুয়ারি চক্রটি এসএমকে মার্কেটে ক্যাসিনো মার্কেট তৈরি করছেন বলে একাধিক বিশ্লেষকরা শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমে কাছে অভিযোগ করেন। আর এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা। মাত্র আড়াই ব্যবধানে এমএমই মার্কেটের কোন কোন শেয়ারের দাম ৮ গুন বাড়িয়েছে।

পুঁজিবাজার ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, এসএমই মার্কেট বন্ধ করে মুল মার্কেট চাঙা করার দাবি তুলেন।কারন এসএমই মার্কেটের শেয়ার নিয়ে পুঁজিবাজারে ক্যাসিনো কান্ড চলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গুলো এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছে। গত ১০ মা ধরে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নি:স্ব হতে চলছে। অথচ মুল মার্কেট স্বাভাবিক করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তেমন কোন ভুমিকা চোখে পড়ছে না।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বের পুঁজিবাজার যে ভাবে পরিচালিত হয়, আমাদের পুঁজিবাজারকে সে ভাবে পরিচালিত করা উচিত। কারণ কারিসাজি অপরাধে ভারতের সাহারা গ্রুপের মলিক সুব্রতের মতো পুঁজিবাজার লুন্ঠনকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক। তা হলে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হবে। বর্তমান পুঁজিবাজারে কারসাজি চক্রদের দাপটে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাতে শুরু করছেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, পুঁজিবাজার এসএমই মার্কেটে ওপেন কারসাজি চলছে। এই চক্রটি এর আগে বীমা খাতের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছিলো। কোথায় এখন সেই বীমা খাতের শেয়ার। ২০৫ টাকার প্রভাতী ইন্সুরেন্স এখন ৭০ টাকা। আমি ঐসময় বিনিয়োগকারীদের সর্তক করছিলাম।

এবার যারা না বুঝে এসএমই মার্কেটের শেয়ার অতিমুল্যায়িত দরে বিনিয়োগ করে নি:স্ব হবে। আমি মনে করি বিনিয়োগকারীরা লোভী। না বুঝে অতিমূল্যায়িত শেয়ার বিনিয়োগ করে। স্কয়ার ফার্মা, ব্যাটবিসির মতো শেয়ার গত দুই বছর বাড়ছে না। অথচ বন্ধ, উৎপাদনহীন কোম্পানির শেয়ারের দাম কয়েক গুন বেড়েছে।

ডিবিএর সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, এসএমই মার্কেটের শেয়ার স্বল্প মুলধনী। ফলে এসএমই মার্কেটের শেয়ার নিয়ে যে কেউ চাইলে কারসাজি করতে পারে। ফলে একটি চক্র শেয়ার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কারসাজি করছে। কারসাজি চক্রটির দুই একটির বিচার হলো কারসাজি বন্ধ হয়ে যেত।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাত্র আড়াই ব্যবধানে প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর মধ্যে স্টার এ্যাডহেসিভের শেয়ারের দর মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে ৮ গুন বেড়েছে। এসএমই মার্কেটের শেয়ার বাজার দেখে মনে হচ্ছে যে ক্যাসিনো বাজার ফেল করছে। এরকম কিন্তু বীমা খাতের শেয়ারের অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছিল।

সেই বীমা খাতের শেয়ারে যে ভাবে উত্থান হয়েছে, সে ভাবে দরপতন হয়েছে। যেমন প্রভাতী ইন্সুরেন্সের ২০৫ টাকার শেয়ার এখন ৭২ টাকা। এর পর ১২৯ টাকার এশিয়ার ইন্সুরেন্স বর্তমানে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। ১৭১ টাকার বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স ৬৮ টাকা। ২৩৯ টাকার ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স বর্তমানে ১২২ টাকা। বীমা খাতের অধিকাংশ শেয়ারের ১০০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে। এখন ঐ চক্রটি এসএমই মার্কেটে ঢুকে পড়ছে।

মুলত কোন কারণ ছাড়াই এসএমই মার্কেটের শেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই রের্কড পরিমান দ্রুতগতিতে এ খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে। ফলে এসএমই মার্কেটের শেয়ার দর বাড়াকে পুঁজিবাজারের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কারণ টানা এক বছরের বেশি সময় দর পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল থাকলেও এসএমই মার্কেটের শেয়ার দর হু হু করে বাড়ছে। এমএমই মার্কেটের শেয়ার দও বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বিনিয়োগকারীরা।

মুলত সংঘবদ্ধভাবে কয়েকটি গ্রুপ মিলে শেয়ার কিনে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এমএমই মার্কেটের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। এখন বেশি দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে কেটে পড়তে শুরু করেছে চক্রটি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চোখের সামনেই বীমা খাতের পর এবার এসএমই মার্কেটের শেয়ার দিয়েই পুঁজিবাজারকে গোরস্তানে পাঠানোর আয়োজন চলছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্টার এ্যাডহেসিভের শেয়ার দর গত ২০ এপ্রিল ছিল ১১ টাকা। বর্তমানে ৮০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। গত ২ মাসের মধ্যে সর্ব্বোচ ৮২ টাকায় লেনদেন হয়। এরপর অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের এর শেয়ার দর গত ২৭ মার্চ ছিল ১৪.৬০ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৬.৬০ টাকা। বৃহস্পতিবার শেয়ারটির দাম ৫৩ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে। অথচ এপেক্স ওয়েভিংয়ের কারখানা বন্ধ। উৎপাদন বন্ধ, লাভের দেখা নেই বহু বছর ধরে। তবুও শেয়ার দর বাড়ছে এপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেডের।

তবে কোম্পানির উৎপাদন এখন বন্ধ, ধারাবাহিকভাবে লোকসান এবং দেশের শীর্ষ ঋণ খেলাপির তালিকায় নাম থাকা কোম্পানিটির শেয়ারদর এভাবে বাড়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। কয়েকজন ব্যক্তি কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ২৭ মর্চ ওয়ারল্যান্ড টয়েসের শেয়ার দর ছিল ২৫ টাকা ২০ পয়সা। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর ৬১ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। গত ১২ এপ্রিল কৃষিবিদ সিডের শেয়ার দর ছিল ১১ টাকা। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর লেনদেন হচ্ছে ৩২ টাকায়।

এর পর ২৮ মার্চ নিয়ালকো অ্যালয়স শেয়ার দর ছিল ১৮ টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর ৫৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। ২৮ মার্চ বেঙ্গল বিস্কুটের শেয়ার দর ছিল ১০০ টাকা। বর্তমানে ১৪২ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। তবে শেয়ারটির দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়।