শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গর্ভণর সাবেক সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, পুঁজিবাজার এবং মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির আরো উন্নতি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এই যৌথ পদক্ষেপকে একত্রে কাজ করার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন। সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারী লেনদেন স্টক এক্সচেঞ্জ প্লাটফরমে করার মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত (vibrant) বন্ড মার্কেট গড়ে উঠবে এবং পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

অবশেষে দেশের পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ড লেনদেন শুরু হতে যাচ্ছে। এলক্ষ্যে রবিবার (১২ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্লাটফরমে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টকএক্সচেঞ্জ লিমিটেড, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে।বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

সমঝোতা স্মারকে বিএসইসির পরিচালক মোঃ আবুল কালাম, বাংলাদেশ ব্যাংকএর পরিচালক (ডিএমডি) খন্দকার সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ গোলাম ফারুক এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর প্রদান করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিও হিসাবের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন। যা অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় বিক্রয় করতে সক্ষম হবেন।

শেয়ারবাজারে লেনদেনকৃত সরকারি সিকিউরিটিজ এর অভিহিত মূল্য হবে ১০০ টাকা এবং মার্কেট লট হবে ১০০০ অর্থাৎ ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা অভিহিত মূল্যের সরকারি সিকিউরিটিজ স্টক এক্সচেঞ্জ প্লাটফরমে লেনদেন করা যাবে।

উল্লেখ্য যে, বিনিয়োগকারীরা yield অথবা price দর উল্লেখপূর্বক সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। বিক্রেতা বিক্রয় মূল্যের সাথে accrued interest/profit পাবেন এবং ক্রেতা বা বন্ডহোল্ডার কুপন ডেট-এ কুপনের অর্থ ব্যাংক একাউন্টে BEFTN এর মাধ্যমে অর্থ জমা পাবেন। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতার কারো ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা থাকবে না।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে সরকারি সিকিউরিটিজ এর মতো ঝুঁকিবিহীন সিকিউরিটিজ অন্তর্ভূক্ত করতে পারবেন, ফলে বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও ঝুঁকি কমে যাবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে আভ্যন্তরীণ খাত হতে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা কমে আসবে। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট তৈরী হবে এবং বাজার মূলধন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

সরকারি সিকিউরিটিজ সেকেন্ডারি বা স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্লাটফরমে লেনদেনের কারণে বিভিন্ন মেয়াদের বন্ডের yield curve পাওয়া যাবে। এই yield curve এর ভিত্তিতে অন্যান্য বন্ডের কুপন অথবা সুদহার/লভ্যাংশ নির্ধারণ করা সহজ হবে এবং yield curve এর ভিত্তিতে বিভিন্ন মেয়াদের বন্ডের ভবিষ্যত সুদহার/লভ্যাংশ প্রাক্কলন করা যাবে।

সমঝোতা সাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা পারভীন। এছাড়াও স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্লাটফরমে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন চালুকরণ কার্যক্রম বিষয়ে উক্ত অনুষ্ঠানে যৌথভাবে একটি উপস্থাপনা পেশ করেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক শেখ মোঃ লুৎফুল কবির এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করেন বিএসইসির কমিশনার ডঃ শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, সিডিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সিসিবিএলের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিকদার, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, এবং ডিএসইর চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। সলীম উল্লাহ উল্লেখ করেন যে, সরকারি সিকিউরিটিজ এর সেকেন্ডারী ট্রেডিং বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ শেয়ারবাজারে সেকেন্ডারী ট্রেডিং এর সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে, একটি প্রাণবন্ত (vibrant) বন্ড মার্কেট তৈরি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, একটি প্রাণবন্ত (vibrant) বন্ড মার্কেট গড়ে উঠলে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমে আসবে এবং Non-performing Loan (NPL) কমে আসবে। বর্তমান ১৬% Market cap. to GDP ratio কে দ্বিগুন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জকমিশন ভবিষ্যতেও একত্রে সমন্বয় ও পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাবে।