শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই ঘটছে একের পর এক দরপতন। পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। ঘুরে দাঁড়িয়ে ‘কোমর শক্ত’ না হতেই বারবার পতন হয় পুঁজিবাজারে। এতে প্রতিনিয়ত মূলধন হারান বিনিয়োগকারীরা। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এবারের ধস এখনো অব্যাহত রয়েছে।

তিন মাস ধরে চলা এবারের ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাড়ে ১৫ লাখ বিনিয়োগকারী। তাদের ক্ষতির পরিমাণ ৬১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। শুধু বিনিয়োগকারীই নন, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শেয়ার কেনাবেচায় জড়িত ব্রোকার হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ৭ হাজার ৮৯ পয়েন্ট। এরপর থেকে চলা দরপতন ২৫ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফলে এই সময়ে সূচক ৯০১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৮৮ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। কমেছে লেনদেন হওয়া প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর তাতে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার বিনিয়োগকারীর বাজার মূলধন কমেছে ৬১ হাজার ৯৫১ কোটি ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ ১১ দিনেই বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলা দরপতন থেকে রক্ষা পেতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় হতে সব ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপর শেয়ার কিনে মার্কেট সার্পোট দেওয়ার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকা আলাদা ফান্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে।

ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলেশন ফান্ড গঠন করেছে। এই ফান্ডের অর্থ আইসিবিরি মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, শেয়ারের দাম কমার সার্কিট ব্রেকার সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের বিধান থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সম্প্রতি কারসাজি চক্রের বিষয়ে মাঠে নেমেছে কর্তৃপক্ষ। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, ‘পুঁজিবাজার ভালো থাকবে’, ‘এখানে নিরাপদে বিনিয়োগ করুন’, ‘নিরাপত্তা আমাদের’ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এমন আশ্বাসে সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করেছেন অনেকে। কমিশনের আশ্বাসে বিনিয়োগ করে গত এক বছরে যে মুনাফা হয়েছিল, গত তিন মাসের ধসে সেই মুনাফা চলে গিয়ে এখন কারো কারো মূলধন অর্ধেক হয়ে গেছে।

কারো কারো তারচেয়েও কমে গেছে। এই দরপতনের পেছনে যারা জড়িত তদন্ত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হবে, হারানো পুঁজি ফিরিয়ে দিতে হবে, বিনিয়োগকারীরা সে দাবি তুলেছেন।

ইউসিবি ক্যাপিটালের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী মোয়াজ্জেম কোরায়েশী বলেছেন, ব্যাংকের সুদ হার কম, তাই পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পেনশনের ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি সঞ্চয়পত্রে। বাকি ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি পুঁজিবাজারে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রয়োজনের ১৫-২০ হাজার টাকা তুলে পরিবারের খরচও মিটিয়েছি।

চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ৭ হাজার ৮৯ পয়েন্ট। এরপর থেকে চলা দরপতন ২৫ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফলে এই সময়ে সূচক ৯০১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৮৮ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। কমেছে লেনদেন হওয়া প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর তাতে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার বিনিয়োগকারীর বাজার মূলধন কমেছে ৬১ হাজার ৯৫১ কোটি ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ ১১ দিনেই বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া ধসের আগেও আমার ৩ লাখ টাকা লাভ ছিল। শেয়ারের দাম ছিল ১৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এখন সেই শেয়ারের দাম কমে মাত্র ১০ লাখ ১৩ হাজার ২২ টাকায় নেমেছে। তিন মাসে আমার ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমি কি করব? বলেন তিনি।

এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী সুজানুর রহমান বলেন, বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বন্ধের রেশানালে পড়ে আমরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হয়েছি। ২০১০ সালের ধসের ক্ষতি পুষিয়ে কেবল লাভের মুখ দেখতে পেলাম। তারপর থেকে আবারও ধস নেমে এল।

চলমান এই ধসে নতুন করে আমার ক্ষতি হয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আমাদের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বেশি। তারা প্রকৃত কারণ না দেখেই গুজবে কান দেয়, ফলে একদিন দরপতন হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, শেয়ার বিক্রি করা শুরু করেন।