শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার চাঙা রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজার স্থিতিশীল করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত ডিভিডেন্ড নিয়ে গঠন করা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ড।

এছাড়া  পুঁজিবাজারের মন্দাভাব কাটাতে গত সপ্তাহে ধারাবাহিক ভাবে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন বিএসইসি। এর মধ্যে প্রথমত, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল ফান্ডে ৮ হাজার ৭১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা জমা হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত জমা হয়েছে মাত্র ৭৯৮ কোটি টাকা, যা ফান্ডটির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মাত্র ৯.১৫ শতাংশ। এখনো প্রায় ৭ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা ফান্ডে জমা হয়নি। ফলে অবণ্টিত লভ্যাংশের খোঁজে শিগগিরই নিরীক্ষা শুরু করবে বিএসইসি।

দ্বিতীয়ত, বিশেষ করে মার্জিন ঋণ প্রদানের সুবিধা বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক পতন থামাতে মার্জিন ঋণ সুবিধা বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করার পর কিছুটা হলেও বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক কাটছে না। কারণ যে ভাবে দরপতন শুরু হয়েছে তাতে মার্জিন ঋণ সুবিধা না বাড়ালো অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ফোর্সের মুখে পড়তে। নতুন নির্দেশনায় মার্জিন ঋণের সুবিধা ১:১ বা নিজস্ব ১ টাকার বিপরীতে ১ টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ করা হয়েছে।

তৃতীয়ত, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। আব্যাহত দর পতনের ফলে পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই ধারাবাহিক পতন রোধে সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশ কার্যকর করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে শেয়ার দর বাড়ার সীমা অপরিবর্তিত রয়েছে।

চতুর্থত, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সুযোগের অপব্যবহারের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জে দিনের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে ১৫ মিনিটের প্রি-ওপেনিং সেশন বাতিল করেছে। তবে ১৫ মিনিটের পোস্ট-ক্লোজিং সেশন চলবে।

অন্য দিকে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) আরও ২০৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিলের আওতায় এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। গত বৃহস্পতিবার ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) এই নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নির্দেশনায় বলা হয়, পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রণোদনা স্কীমের আওতায় আইসিবির মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের সুদ ও আসল হিসেবে আদায়কৃত অর্থ পুন:ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলো। এ লক্ষ্যে ‘পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল ২’ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নিচ্ছে বহুমুখী পদক্ষেপ। এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইবে বলে আশা করা হচ্ছে। তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তিনি বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে বড় কোনো সমস্যা নেই।

এই সপ্তাহ থেকেই বাজার ভালো হবে। আর এজন্য বিএসইসি দিন রাত সমানে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড সিএমএসিএফের সঙ্গে বিএসইসি ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকটি লিস্টেড কোম্পানি বিএপিএলসির অংশগ্রহণে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এতে জানানো হয়, সংস্থাগুলোর গৃহীত নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারের তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করে বাজারের ভাবমূর্তি ফেরানো হবে।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১ ঘণ্টা আলাপের সুযোগ হয়েছে। তার ডাইনামিক নেতৃত্বে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বড় কোন সমস্যা নেই। দেশের অর্থনীতি খুবই শক্তিশালী। ভয়ের কিছু নেই। বর্তমানে সারাবিশ্বেই একটু সমস্যা হচ্ছে। এটা সমায়িক। সমস্যা খুব শিগগিরই কেটে যাবে।’

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি কমিশনের তড়িৎ কিছু সিদ্ধান্তের ফলে বাজার বড় পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাজারের উন্নতিতে কমিশনের নানা পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তবে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করলে বাজার খারাপ সময়ও টিকে থাকা যায় এবং পরবর্তীতে বাজার ভালো হলে সুফল নিয়ে আসে।