শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের বড় ধরনের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে হঠাৎ করে সূচকের বড় দরপতনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। সোমবার লেনদেনের শুরু থেকে ধীরে ধীরে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে। এদিন পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপে লেনদেন হওয়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। অধিকাংশ শেয়ারের দাম কমায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে সূচক কমেছে ১৩৪ পয়েন্ট।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক কমেছে ৩৮৪ পয়েন্ট। আজকের এই দরপতনে দুই মাসের আগের জায়গায় চলে এসেছে পুঁজিবাজার। অর্থাৎ ডিএসইর সূচক আবারও সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে চলে এসেছে। এর আগে চলতি বছরের ৮ মর্চ ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে। আজ ১৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৩০ পয়েন্টে। লেনদেনের এক পর্যায়ে অনেক শেয়ার ক্রেতা-শূন্য হয়ে পড়ে।

শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমের পক্ষ থেকে বাজারের এই পরিস্থিতির কারণ ও বিনিয়োগকারীদের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েনের (ডিবিএ) সভাপতি ও গ্লোবাল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিওকে।

ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যু যেতে না যেতেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে দেউলিয়াত্ব দেশের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শ্রীলঙ্কার মতোই বাংলাদেশের অর্থনীতি দেউলিয়া হতে পারে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে পুঁজিবাজারে। আসলে পুঁজিবাজারে তীব্র দর পতনের তেমন কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন ডিবিএ সভাপতি।

তিনি বলেন, বেশ কিছু কারণে দেশের অর্থনীতি এই মুহূর্তে কিছুটা চাপে আছে। কিন্তু এই চাপ সামলে উঠার মতো ক্ষমতাও আছে আমাদের। এর আগের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনাভাইরাস অতিমারি আমাকে অর্থনীতিকে কাবু করতে পারেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা যে কোনো দামে শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন। তাতেই সূচকের বড় পতন হচ্ছে। মূলত মনস্তাত্ত্বিক কারণেই এমন অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার।

তিনি মনে করেন, বাজার নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের অর্থনীতি বিদ্যমান চাপ কাটিয়ে উঠতে পারবে। সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রয়োজনে আরও ব্যবস্থা নেবে হয়তো। অকারণে ভীত হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করে বিনিয়োগকারীদের উচিত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা। দুই বছর আগেও কিন্তু করোনা পরিস্থিতির প্রভাবে বাজার অনেকটা গতিহীন হয়ে পড়েছিল।

কিন্তু এরপর এই বাজারকেও দারুণ গতিশীল হতে দেখেছি আমরা। লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এক সময়। শেয়ারের দাম এবং সূচকও অনেক বেড়েছে। এখন যে অবস্থা চলছে সেটিও নিশ্চিতভাবেই সাময়িক। বাজার আবার গতিশীল হবে। যারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন, তারা তখন লাভবান হবেন। আর লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিলে কিন্তু ওই লোকসান বুক করা হয়ে যায়। তাতে কমে যায় মূলধন। ফলে আর ওই ঘাটতি পূরণ করা সহজ হয় না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার মূলত ব্যক্তি বিনিয়োগকারী নির্ভর। এই বাজারের ৮০ শতাংশ লেনদেন করে থাকেন তারা। বিশ্ব জুড়েই ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা সহজে প্রভাবিত হন। তারা গুজবে বিশ্বাস করেন, হুজুগে সিদ্ধান্ত নেন। বিভিন্ন সময়ে অসাধু চক্র ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠি তাদের ফায়দা হাসিলের জন্য তাদেরকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে থাকেন। বাংলাদেশের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ কম থাকায় এটি সহজ হয়।