শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সে একের পর এক অনিয়ম বেড়েই চলছে। গ্রাহককে পলিসিরি টাকা না দেওয়া, তহবিল বাড়িয়ে দেখানো এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তা-ই নয়, ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে টাকা আদায় হলেও তা কোম্পানির হিসাবে দেখানো হয়নি। ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বড় ধরনের গরমিল।

এমনকি কোম্পানির আর্থিক রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও মানদণ্ড মানা হয়নি। এবার নতুন করে আর বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে কোম্পানিতে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ডেটাবেজ থেকে প্রায় ৩০,০০০ ডাটা উধাও, কি ছিল উক্ত ডাটায়। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এমন নাজুক অবস্থা দেখে সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য-নানা অনিয়মে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ‘বারোটা বেজেছে’।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এ চলমান অডিট কার্যক্রম ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে আইটি ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক গান-গ্রামীণ বিভাগের কালেকশন টেবিল, মানি রিসিপ্ট, প্রিমিয়াম রিসিপ্ট সংক্রান্ত প্রচুর পরিমাণ ডাটা ডিলিটের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিয়োজিত একনাবিন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ফার্ম অডিট কার্যক্রম পরিচালনাকালীন গত ২৭ অক্টোবর ২০২১,

২৮ অক্টোবর ২০২১, ৩১ অক্টোবর ২০২১ ইং তারিখে সহ বেশ কিছু চিঠি জনাব কাজী এহতেশাম ফয়সাল, আটি ইনচার্জ এর নিকট গন-গ্রামীণ বীমা বিভাগের ডাটাবেজের তথ্য চেয়ে রিকুইজিশন দেয়। পরবর্তীতে কাজী এহতেশাম ফয়সাল, আইটি ইনচার্জ এবং শেখ মহসিন রেজা (এভিপি, আইটি)-র বিরুদ্ধে বীমা পলিসি গ্রাহকদের ডাটা ডিলিট সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়।

একনাবিন এর গত ৩০ নভেম্বর ২০২১ এবং ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখের অডিট রিপোর্টে ডাটা ডিলিটসহ কোম্পানির প্রাক্তন চেয়ারম্যান জনাব মঞ্জুরুর রহমান, তার পুত্র সাসপেন্ডেড পরিচালক জিয়াদ রহমান এবং তার কন্যা প্রাক্তন সিইও মিসেস আদিবা রহমানসহ বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩,৬৮৭ কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। চলমান অডিটের কার্যক্রম ব্যাহত করার উদ্দেশ্যেই আইটি ডিপার্টমেন্ট থেকে উক্ত ডাটা ডিলিট করা হয়েছে।

একনাবিন-এর অডিট রিপোর্টে উক্ত ডাটা ডিলিটের বিষয়টিকে উচ্চ ঝুকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টেও ডাটা ডিলিটের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। উল্লেখ্য যে, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড-এর সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক সংগঠিত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান ডঃ শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর নির্দেশে মেসার্স ফেমস এন্ড আর এবং মেসার্স হাওলাদার এন্ড ইউনুস চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ফার্মদ্বয়ের পরিচালিত অডিট

রিপোর্টে যথাক্রমে ২৫টি এবং ২২টি অডিট আপত্তি প্রকাশিত হয়। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালীন বোর্ড থেকে কোন প্রকার জাবব না পেয়ে বাধ্য হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে বীমা পলিসি গ্রাহকগনের স্বার্থে রক্ষার্থে বীমা আইন, ২০১০ এর ৯৫ ধারা অনুযায়ী ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর কোম্পানি পরিচালন পর্ষদকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগ করে এবং প্রশাসককে অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করার মাধ্যমে অডিট রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে বীমা আইন, ২০১০ এর ৯৬ ধারায় একটি রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। প্রাক্তন পরিচালনা পর্ষদ বরখাস্ত হলেও তাদের নির্দেশে কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মচারী অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।