শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: মিউচুয়াল ফান্ড কাঠামোতে একটি অ্যাসেট ম্যানেজার বা সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ছোট ছোট সঞ্চয় সংগ্রহ করে একটি বড় ফান্ড গঠন করে। এরপর ওই ফান্ড থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপক তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, অর্থবাজারের বিভিন্ন পণ্য বা সেবা, সরকারি ও করপোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করে। উদ্দেশ্য থাকে ফান্ডটির অর্থ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করা।

একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ বা সময় শেষে ফান্ডের বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা অর্জিত হয়, তা আনুপাতিক হারে ওই ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। ফলে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী সহজেই তাঁর অল্প বিনিয়োগের বিপরীতে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হতে পারেন। এ ধরনের সমন্বিত বিনিয়োগের মাধ্যমকে মিউচুয়াল ফান্ড বলা হয়। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে ব্যক্তিশ্রেণির একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী বেশ কিছু সুবিধা পেতে পারেন। সেগুলো হলো:

ক. দীর্ঘ মেয়াদে নিয়ন্ত্রিত ঝুঁকি নিয়ে উচ্চ হারে চক্রবৃদ্ধি মুনাফার সুবিধা

খ. আয়কর রেয়াতসহ অন্যান্য কর–সুবিধা

গ. প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও থেকে লাভবান হওয়া। এখানে বলে রাখা ভালো, মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য আইপিওতে কোটাসুবিধা থাকে। আবার সম্পদ ব্যবস্থাপকেরা বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে অপেক্ষাকৃত কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।

ঘ. সুলভে বিনিয়োগ ও সম্পদ ব্যবস্থাপকদের পেশাগত দক্ষতা ও গবেষণা সেবা নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হওয়া

কিছু মিউচুয়াল ফান্ড আছে, যেগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের মতো কেনাবেচা করা যায়। এ ধরনের ফান্ডকে ক্লোজড এন্ড বা মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বলা হয়। আবার কিছু মিউচুয়াল ফান্ড সরাসরি সম্পদ ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে কিনতে বা বিক্রি করতে হয়। এসব ফান্ড ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সামগ্রিক বাস্তবতায় একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করাটা বেশি লাভজনক।

সারা বিশ্বে বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এ ধরনের ফান্ড এখনো খুব বেশি সুপরিচিত নয়। বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের সর্বমোট বিনিয়োগকৃত সম্পদের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই অনুপাত ৬০ শতাংশের বেশি। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড খাত দ্রুত সামনের দিকে এগোচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ মেয়াদে খুব ভালো মুনাফা দিচ্ছে, এ রকম পুরোনো সম্পদ ব্যবস্থাপকদের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিশীল সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সনদ পেয়েছে। তারা নতুন বেশ কিছু মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারে এনেছে। যেগুলোর নৈপুণ্য এখন পর্যন্ত বেশ ভালো।

মিউচুয়াল ফান্ড প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো একটি বিনিয়োগ মাধ্যম। এ ধরনের ফান্ড পরিচালনার সঙ্গে তিন ধরনের প্রতিষ্ঠানের সরাসরি যুক্ততা রয়েছে। সেগুলো হলো—১. বিএসইসিতে নিবন্ধিত ট্রাস্টি বা হেফাজতকারী প্রতিষ্ঠান। যার কাজ হচ্ছে ট্রাস্ট চুক্তি অনুযায়ী, ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। ২. বিএসইসির নিবন্ধিত কাস্টডিয়ান প্রতিষ্ঠান; যার অধীনে নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ঝুড়িতে থাকা সব সম্পদ নিরাপদে রাখা। ৩. বিএসইসির নিবন্ধিত সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান। যারা নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ যথাযথভাবে বিনিয়োগের দায়িত্ব পালন করে।

বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ফান্ডের সর্বশেষ নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) বা প্রকৃত সম্পদমূল্য জানতে পারেন। ওই মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপকের ওয়েবসাইটে এই এনএভি প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান তার কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দুই সপ্তাহ পরপর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে জমা দেয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, চাইলে তা সহজেই জানতে পারবেন। ওই মিউচুয়াল ফান্ডের ত্রৈমাসিক আর্থিক বিবরণীতে বিনিয়োগের সব তথ্য থাকে।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রায় ৩৪টি ক্লোজড এন্ড বা মেয়াদি এবং ৬৮টি ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড আছে। কিন্তু এসব মিউচুয়াল ফান্ডের সব কটি একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য উপযুক্ত না–ও হতে পারে। তাহলে কীভাবে আমরা আমাদের জন্য সঠিক মিউচুয়াল ফান্ডটি বেছে নিতে পারি? সে জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। সেসব পদ্ধতি থাকবে পরের আরেকটি লেখায়।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, সঞ্চয় ডটকম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এড্জ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট।