শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্লাটফর্ম পুঁজিবাজার তথা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে তা দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা। কৃষিবিদ গ্রুপ দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ৫ জন কৃষিবিদ মিলে ২০০১ সালে এই গ্রুপের কার্যক্রম শুরু করে। মুলত কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য কৃষিবিদ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। কৃষিবিদ ফিড মূলত পোল্ট্রি ফিড, ফিশ ফিড ও ক্যাটেল ফিড এই তিন ধরনের খাবার উৎপাদন করে থাকে।

মুরগী, মাছ ও গবাদি পশুর চাহিদা এবং ধরনের উপর নির্ভর করে প্রায় ৬৬ ধরণের ফিড উৎপাদন করে থাকে। কোম্পানিটি তার ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজার থেকে ২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এসএমই খাতে কৃষিবিদ ফিড লিমিটেডের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার (কিউআইও) আবেদনের শুরু হবে আগামী ১০ অক্টোবর। চলবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রায় দুই বছর আগে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির জন্য একটি স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম চালু করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে নানা কারণে লেনদেন চালু হয়নি। তবে নিয়ালকো অ্যালয়সের পর এসএমই প্লাটফম খাতে আগ্রহ বাড়ছে কোম্পানিগুলোর।

বুক বিল্ডিং ও ফিক্সড প্রাইস দুই পদ্ধতিতেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ইস্যুয়ার কোম্পানি ও কেবল এক কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে এমন ব্যক্তি কিনতে পারবেন এসব শেয়ার। এদিকে, স্বল্পমূলধনী কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করার উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বর্তমানে দেশে ফিড মার্কেটের আকার অনেক বড়। প্রতি মাসে প্রায় কয়েক লাখ মেট্রিক টন চাহিদা রয়েছে। তবে একটি মাত্র ফ্যাক্টরি থাকায় কৃষিবিদ ফিড সে হারে উৎপাদন করতে পারছে না।

ফলে কৃষিবিদ ফিড আরো কয়েকটি ফ্যাক্টরি স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বর্তমানে কৃষিবিদ ফিডের উৎপাদনের ক্ষমতা প্রতিমাসে ৬ হাজার মেট্রিক টন, যা আগামী অর্থবছরের মধ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ড. আলী আফজাল।

বিএসইসি সূত্র জানায়, কোম্পানিটি কিউআইও এর মাধ্যমে প্রতিটি ১০ টাকা মূলে ২.২০ কোটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২২ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, কারখানা ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ডিজেল জেনারেটর ক্রয়, ডেলিভারি ভ্যান ক্রয় এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খরচ খাতে ব্যয় করবে।

কোম্পানিটির ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৬৭ টাকা এবং পুন:মূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৮.৪৭ টাকায়। এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছর ইস্যুয়ার কোম্পানি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে যথাক্রমে এমটিবি ক্যাপিটাল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা জটিল। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো ব্যাংক ঋণ পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় কিছু এসএমই কোম্পানিকে ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলোও তা ফেরত পেতে অনেক জটিলতায় পড়েন। তাছাড়া এসব শিল্প ব্যাংকের সুদ দিতে গিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারনে বাধাগ্রস্থ হয়।

অপরদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নে পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই। এখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে হয় কিন্তু কোনো সুদ প্রদান করতে হয় না। তাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে এসএমই কোম্পানিগুলো একদিকে স্বীকৃতি পাবে অন্যদিকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাতে এসএমই খাতের উন্নতি তরান্বিত হবে। একই সঙ্গে এই খাত দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, এসএমই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে একদিকে যেমন স্বীকৃতি পাবে অপরদিকে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারনের সুযোগ পাবে। দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই। বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বৃদ্ধি পাবে।

কৃষিবিদ ফিডের চেয়ারম্যান ড. আলী আফজাল বলেন, কৃষিবিদ গ্রুপ দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। আমরা ৫ জন কৃষিবিদ মিলে ২০০১ সালে এই গ্রুপের কার্যক্রম শুরু করি। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ একটি কৃষি-প্রধান দেশ। আমাদের দেশের উন্নতি, অগ্রগতি অনেকাংশেই কৃষির উপর নির্ভরশীল। এদেশের কৃষকের জন্য কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সেই ভাবনা থেকেই আমাদের কৃষিবিদ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়।

তাছাড়া কৃষিবিদ ফিড মূলত পোল্ট্রি ফিড, ফিশ ফিড ও ক্যাটেল ফিড- এই তিন ধরনের খাবার উৎপাদন করে থাকে। মুরগী, মাছ ও গবাদি পশুর চাহিদা এবং ধরনের উপর নির্ভর করে আমরা প্রায় ৬৬ ধরণের ফিড উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া কৃষিজাত খাদ্যের বাজার অনেক বড়। তবে এ বাজারে আমাদের অবস্থান অতো বড় নয়।

বড় বড় নামকরা কোম্পানিগুলো যদি এই বাজারের প্রথম সারির হয় তবে তার পরের সারিতেই আমাদের অবস্থান। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলবো যদি কোয়ালিটি চেক করা হয় বাংলাদেশে, যে কোনো কোম্পানি থেকে আমাদের পণ্যের মান ভাল। কোয়ালিটিতে আমরা নাম্বার ওয়ান।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা অর্থের একটি অংশ দিয়ে এই বছরেই আমরা কৃষিবিদ ফিডের দুইটি নতুন কারখানা স্থাপন করবো। বর্তমানে আমাদের শুধু একটি কারখানা আছে। আমরা মাগুরাতে প্রায় ১০ একর জমি কিনেছি। দিনাজপুরে কেনা হয়েছে ৮ একর জায়গা। আমরা এই দুই জেলায় ২টি কারখানা স্থাপন করবো।

এতে আরও সহজে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের খামারিদের কাছে আমাদের পণ্য পৌঁছে দিতে পারবো। এতে আমাদের পণ্য পরিবহন খরচ অনেকটা সাশ্রয় হবে, আ কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখবে। এছাড়া আমাদের বিদ্যমান কারখানাগুলোতেও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।