শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দৃশ্যপট থেকে বিদায় নেওয়া অ্যাকর্ড হঠাৎ করে দুই বছরের জন্য বাংলাদেশে কাজ করার ঘোষণা দেওয়ায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে। আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন অ্যাকর্ডের বিষয়ে ব্র্যান্ড ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে চুক্তি হবে।

তবে তার আগেই কারখানা মালিকরা একে অপরের কাছে জানতে চাইছেন, অ্যাকর্ড কীভাবে কাজ করবে আর তাদের উপর কী ধরণের নতুন চাপ আসতে পারে। কিন্তু অ্যাকর্ড নতুন করে আর্বিভুত হওয়ায় পোশাক খাতের শ্রমিক নেতারা তাদের সন্তোষের কথা জানিয়েছেন।

এদিকে, গত শনিবার পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র বোর্ড সভায় ইস্যুটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। সভায় কারখানা সদস্যরা তাদের বিভ্রান্তি, অস্বস্তির বিষয়টি তুলে ধরে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সদস্যদের কাছে পরিস্কার বার্তা পাঠানোর তাগিদ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার একটি প্রেস রিলিজ দেয় বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন ছাড়া অ্যাকর্ড বা অন্য কোন সংস্থা বাংলাদেশে কোন কাজ চালাতে পারবে না। এছাড়া কারখানার সেফটি কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা আরএমজি সাস্টেইন্যাবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি এর বাইরে অন্য কোন সংস্থার কাজ করার কোন ধরণের আইনগত এখতিয়ার নেই।

বিজিএমইএ’র একজন পরিচালক বলেন, “পুরো কাজটি তারা খুব গোপনে করেছে। পোশাক মালিকদের নিয়ে কাজ করবে, অথচ তাদের এই কার্যক্রমের কিছুই জানে না বিজিএমইএ। অ্যাকর্ডের অনুপস্থিতিতে আরএসসিতো ভালোই কাজ করছিলো। এখন বলা নেই, কওয়া নেই  হঠাৎ করে অ্যাকর্ডের আবির্ভাবে পোশাক কারখানা মালিকদের মধ্য প্যানিক শুরু হয়ে গেছে। তারা আবার মুষড়ে পড়েছে। কারণ অ্যাকর্ড কারখানা মালিকদের উপর রীতিমত অত্যাচার করে গেছে।”

তিনি বলেন, “যেসব যন্ত্রপাতি কারখানায় স্থাপন করার জন্য বলতো, তার স্পেসিফিকেশন এমন ছিলো, নির্দিষ্ট একটি কোম্পানি থেকেই কিনতে হবে। একই জিনিস অন্য কোম্পানির কাছ থেকে যে দামে কিনতে পারতাম, অ্যাকর্ড নির্ধারিত কোম্পানির কাছে থেকে দ্বিগুণের বেশি দামে কিনতে হতো। তাতে কেবল বাংলাদেশের উপর দিয়ে ওইসব কোম্পানির ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেল।”

এর আগে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পাঁচ বছরের জন্য গঠন হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেইফটি ইন বাংলাদেশ যা বাংলাদেশ অ্যাকর্ড নামে পরিচিত। এতে যুক্ত ছিলো ২২৮টি বিদেশী ব্র্যান্ড ও বায়ার। পাঁচ বছর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা দেখার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও তারা প্রায় সাড়ে ছয় বছর কাজ করে। এর মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কারখানা মালিক ও সরকারের সঙ্গে দুরত্ব বাড়ে তাদের।

এর মধ্যে গত বছর গঠন হয় আরএসসি। একটি চুক্তির মাধ্যমে আরএসসি’র কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে চলে যায় অ্যাকর্ড। অবশ্য আরএসসির কার্যক্রম মূলত অ্যাকর্ডের পলিসি, লজিস্টিক ও লোকবল দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছিল।

এর মধ্যেই বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলো অ্যাকর্ডের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের কারখানা বর্তমান পরিস্থিতি শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ নয় বলে অভিযোগ করে আসছিলো। কিন্তু অভিযোগ করলেও ভেতরে ভেতরে আরো বেশি শক্তি নিয়ে অ্যাকর্ড ফিরে আসবে – তা ভাবেননি মালিকপক্ষ।

নতুন অ্যাকর্ডের নাম হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ এন্ড সেফটি ইন দ্য টেক্সটাইল এন্ড গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি।

নতুন অ্যাকর্ড গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের দুইজন শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন, আগে কেবল কারখানায় শ্রমিকের সেফটির বিষয়টি অ্যাকর্ড দেখতো। নতুন অ্যাকর্ডে সেফটির পাশাপাশি শ্রমিকের হিউম্যান রাইটস, হেল্থ এর বিষয়টিও দেখবে। এর ফলে শ্রমিকের ফ্রিডম অব অ্যাসোসিয়েশন ভায়োলেশন হলে তারা ইস্যুটি নিয়ে পরোক্ষভাবে কাজ করতে পারবে।

ইন্টারন্যাশাল অ্যকর্ড গঠনের পেছনে কাজ করেছেন শ্রমিক নেতা বাবুল আখতার। অ্যাকর্ড গঠনে নিজর সন্তোষের কথা জানিয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা খুবই খুশি। কেননা শ্রমিকের প্রতি অত্যাচার হলে তারা ন্যায় বিচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।”

তিনি বলেন, নতুন অ্যাকর্ডে ইতোমধ্যে ২৩১টি ব্র্যান্ড ও বায়ার স্বাক্ষর করেছে, আরো অনেকেই যুক্ত হবে। অপর একজন শ্রমিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিজিএমইএ বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে চাইছে।

তৈরি পোশাক খাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে যে আরএসসি কাজ করছে, তার একটি পক্ষ অ্যাকর্ড। চলতি মাসেই তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য অ্যাকর্ডের মেয়াদ না বাড়ালে তারা তো আরএসসিতেও থাকতে পারতো না।”

“তবে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়লেও বাংলাদেশে যে কোন কাজ আরএসসির অধীনেও হওয়া উচিত। এছাড়া নতুন কোন বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাইলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা ও অ্যাপ্রোভাল নেওয়ার সুযোগ রয়েছে” – বলেন তিনি।

২০১৩ সালে গঠিত হওয়া অ্যাকর্ডের আওতাভুক্ত কারখানা ছিলো ১৫০০। অ্যকর্ডের বাইরে আমেরিকাভিত্তিক ক্রেতাদের উদ্যোগে গঠিত হওয়া অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কারস সেইফটি এর মাধ্যমে আলাদা আরেকটি উদ্যোগে ৬০০ পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারক শেষে তারা চলে যায়। তবে এর বদলে সেখানে নিরাপন একটি উদ্যোগ কাজ করছে।

এ দুটি উদ্যোগের বাইরে থাকা কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ, যার অধীনে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ৭৫০টি কারখানা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনে