শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলতি বছরই টিকা উৎপাদনে যাচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়া শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের শুরুতে পরিকল্পনা ছিল সরকারকে টিকা এনে সহযোগিতা করা। কিন্তু এখন টিকা নিয়ে যে অবস্থা, নিজেদেরই টিকা বানানো ছাড়া কোনো পথ নেই।

নাজমুল হাসান পাপন বলেন, টিকা উৎপাদনে যাদের সক্ষমতা রয়েছে তারা কেন এটা বানাচ্ছে না? তারা কেন এগিয়ে আসল না? কিন্তু একটা জিনিস আমরা বলতে পারি, বেক্সিমকো এ বছরের মধ্যে টিকা উৎপাদনে যেতে পারে। তবে এটা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

রাশিয়ার ফর্মুলার টিকা বাংলাদেশে তৈরি হবে বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে পাপন বলেন, বিশ্বে এখন অনুমোদন পাওয়া চারটি টিকা রয়েছে। ফাইজার, মর্ডানা, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন। এগুলো ছাড়া অনুমোদনের আগে রাশিয়ার টিকা উৎপাদন করে লাভ নেই। আপনার কী বলতে চাচ্ছেন যেটা এখনও অনুমোদন পায়নি এমন টিকা আমাদের দেশে উৎপাদন করব?

রাশিয়ার টিকার অনুমোদন নিয়ে পাপন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অথবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অনুমোদন পেতে হবে। যদি এদের কোনো একটিতেও অনুমোদন না হয়ে থাকে তাহলে কেন এটা আমার বানাব? এটা সরকারও অনুমোদন দেবে না। সুতরাং আমি বলতে চাচ্ছি, যেকোনো মূল্যে অনুমোদন পাইলে অবশ্যই আমরা সেটি বানাবো।

টিকার সংকট থাকবে না জানিয়ে পাপন বলেন, আগামী দুই মাসে পর টিকার সংকট থাকবে না, প্রচুর টিকা চলে আসবে। দুই মাস পর আমাদের কাছে আরও অনেক অপশন চলে আসবে। টিকার সংকট জুন পর্যন্ত থাকবে। এরপর আর কোনো সংকট থাকবে না।

সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকার চুক্তি হলেও দেড় কোটি ডোজ টিকার টাকা আমরা দিয়ে দিয়েছি। এই টিকা মে মাসের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে আমার পেয়েছি মাত্র ৭০ লাখ। বাকি টিকা আমাদের দিয়ে দিক। তারপর হয়তো ওদের দিকে তাকিয়ে থাকবো না। ‘ভারতও সেরামকে অগ্রিম টাকা দেয়নি, আমরা দিয়েছি’

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন বলেন, আমরা সেরাম ইনস্টিটিউটকে টিকা পেতে অগ্রিম টাকা দিয়েছি। আর কোনো দেশ অগ্রিম টাকা দেয়নি, এমনকি ভারতও দেয়নি। সুতরাং আমাদের টিকা দিতেই হবে।

তিনি বলেন, ‘সরকার সেরামকে অগ্রিম যে টাকা দিয়েছে সে অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেবে না, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের স্পষ্ট ভাষায় বলা উচিত অগ্রিম টাকা অনুযায়ী ভ্যাকসিন আমাদের দিতে হবে।’ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ নেন পাপন। দেশজুড়ে শুরু হওয়া গণ-টিকাদান কর্মসূচির অংশ হিসেব রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিয়েছিলেন তিনি।

কবে নাগাদ টিকা আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা কঠিন। তারা বলছে আমাদের জন্য ৫০ লাখ ডোজ প্রস্তুত করে রেখে দিয়েছে। সরকারের অনুমতি পেলেই তারা পাঠিয়ে দেবে। গত মাসে ৫০ লাখ ডোজ আসার কথা থাকলেও দিয়েছে ২০ লাখ, এ মাসেরটা তারা এখনও দেয়নি।

পাপন বলেন, আমার কথা হলো, আমাদের সরকার অগ্রিম টাকা দিয়ে যে টিকা নিশ্চিত করেছে, সেটা সে দেশের সরকার কোনোভাবেই আটকাতে পারে না। কেনোভাবেই সেটা পারে না। অন্য দেশের সঙ্গে কী হলো এটা আমাদের দেখার বিষয় না। প্রথমত এটা আমাদের টাকা, টাকা নিয়ে টিকা দেবে না, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। দ্বিতীয়ত, আমাদের এরইমধ্যে দ্বিতীয় ডোজের সংকট চলে এসেছে।

আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি, যেহেতু সেরাম আমাদের কাছে লিখিত জানিয়েছে, সরকার আটকে রেখেছে। কাজেই আমি মনে করি, এরপরে আমাদের সরকারের চুপ করে থাকা উচিত নয়। আমাদের বলা উচিত আমরা অগ্রিম টাকা দিয়েছি, আমাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই টিকা দিতে হবে। আনঅফিসিয়ালি বা ফোনে একটু কথা বললে হবে না। এটা নিয়ে সরকারের শক্ত অবস্থান নিতে হবে।’