শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: কঠোর লকডাউনেও ব্যাংকের সাথে সমন্বয় রেখে পুঁজিবাজার খোলা থাকবে বলে মন্তব্য করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত- উল- ইসলাম। তিনি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সাথে একান্ত আলোচনায় বলেন, ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে পুঁজিবাজার চালু রাখা হবে। ব্যাংকে লেনদেন সচল থাকলে বাজারেও লেনদেন অব্যাহত থাকবে। এ সিদ্ধান্ত আমরা আগেই নিয়ে রেখেছি।

তাই লকডাউনে পুঁজিবাজারের লেনদেন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু থাকলে পুঁজিবাজারও চালু থাকবে। ব্যাংকি কার্যক্রম পরিচালনার সময় কমে আসলে পুঁজিবাজারের লেনদেন সময়ও কমে আসবে। করোনার কারণে আমরা পুঁজিবাজার বন্ধ করবো না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালীন মার্কেট বন্ধ করে দিলে কোন সমাধান হবে না। কারণ করোনা কখন যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এটা কয়েক বছরও চলতে পারে। এতো দিন অর্থনীতির চাকা বন্ধ থাকতে পারে না। এর আগে লকডাউন গুজবে পুঁজিবাজারের পতন থামাতে গত ২২ মার্চ জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিএসইসি।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, করোনাকালসহ যেকোনো সময় ব্যাংকের কার্যক্রম চালু থাকলে শেয়ারবাজারের লেনদেনও অব্যাহত থাকবে। তাই এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর আগে করোনার কারণে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে তখন পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় একটানা ৬৬ দিন লেনদেন বন্ধ ছিল শেয়ারবাজারে। দীর্ঘ ওই ছুটির পর ৩১ মে থেকে পুনরায় লেনদেন চালু হয়।

এদিকে আগামী সপ্তাহে থেকে এক সপ্তাহের জন্য জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান এমনকি সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রেখে কঠোর লকডাউন দেয়া হলেও ব্যাংক বন্ধ থাকবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে জরুরি সেবা হিসেবেই দেখার কথা জানিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে।

তবে প্রথম দিন থেকেই মোটামুটি শিথিল লকডাউন। তৃতীয় দিন থেকে দেশের সব মহানগরে চালু করে দেয়া হয় বাস। যদিও অন্যান্য যানবাহন চলছে প্রথম দিন থেকেই। এরপর খুলে দেয়া হয় দোকানপাট ও শপিং মল। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিদিন রেকর্ড করতে থাকায় সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানানো হয়েছে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ব্যাংক হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় সেবা। এ সেবা দিতে আমরা বাধ্য এবং এটা চলমান রাখতে হবে।” এ সংকটের মধ্যেও ব্যাংক খোলা রাখতে হবে। কারণ, মানুষ ব্যাংকিং লেনদেন না করতে পারলে অন্যান্য সংকটে পড়বে। চিকিৎসার জন্যও ব্যাংকের টাকা দরকার। সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে, কোন কৌশলে ব্যাংকিং সেবা দেয়া যায় সেটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

চলমান লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকের লেনদেন চলছে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। অফিসের অন্যান্য কার্যক্রম চলছে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। ব্যাংকের লেনদেন পরিবর্তন করায় পুঁজিবাজারের লেনদেনও পরিবর্তন করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের লেনদেন সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের লেনদেন মোবাইল অ্যাপস, টেলিফোন ইত্যাদির মাধ্য সম্পন্ন করার জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিয়োগকারীদের বার বার অনুরোধ করা হয়েছে।

কঠোর লকডাউনেও একই সময়সীমা থাকবে কি না এমন প্রশ্নও ছিল সিরাজুল ইসলামের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, “রোববার সরকারের নির্দেশনা জারি হওয়ার পর কীভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাব।” তবে সীমিত আকারে হলেও ব্যাংকের লেনদেন চালু রাখা হবে এটি নিশ্চিত করেছেন এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে (শুক্রবার) বলেন, “এটা কমপ্লিট লকডাউন, কঠোর লকডাউন। কোনো অফিস আদালত খোলা থাকবে না। সেখানে শুধু জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে।”