শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য চালু থাকা লটারি পদ্ধতি বাতিল করতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। লটারির পরিবর্তে আইপিওতে আবেদন করা সব সাধারণ বিনিয়োগকারী আনুপাতিক হারে শেয়ার পাবেন। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএসইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আইপিও শেয়ার পাওয়ার এ ব্যবস্থাটি অনেকটা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের আইপিও পদ্ধতির মতো হবে। নতুন এ পদ্ধতি আবেদনকারী ব্যক্তিশ্রেণির সব বিনিয়োগকারীকে আইপিও শেয়ারের নির্ধারিত একটি অংশ পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করবে।

আনুপাতিক হারের অর্থ হচ্ছে একজন বিনিয়োগকারীকে তার আবেদনের একটি অংশ বা পুরো অংশ অনুসারে শেয়ারের একটি পরিমাণ বরাদ্দ করা। এটি প্রতিটি আবেদনকারীর বিনিয়োগকে ওভার সাবস্ক্রিপশনের পরিমাণকে বিভক্ত করে এবং তারপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ফ্লোটিং শেয়ারের মোট ভ্যালু দ্বারা ফলাফল ভগ্নাংশকে গুণ করে গণনা করা হবে।

বর্তমান আইন অনুসারে অভিহিত মূল্যে আইপিওতে আসা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ থাকে, যার ১০ শতাংশ আবার এনআরবিদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। আর এ পদ্ধতিতে আসার আইপিও শেয়ারের মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হয়, যার মধ্য থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে। আর বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্য ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ করে শেয়ার বরাদ্দ থাকে।

ধরা যাক ক, খ, ও গ বিনিয়োগকারী অভিহিত মূল্যে আসা আইপিওতে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ২৫ হাজার ও ১৫ হাজার টাকার শেয়ারের জন্য আবেদন জানাল। এ ক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট আইপিওটিতে তিনগুণ আবেদন জমা পড়ে তাহলে আবেদনকারী ক, খ ও গ বিনিয়োগকারীকে ১৬ হাজার ৬৬৬ টাকা, ৮ হাজার ৩৩৩ ও ৫ হাজার টাকার শেয়ার বিতরণ করা হবে। আর যদি আইপিওতে অতিরিক্ত আবেদন (ওভার সাবস্ক্রাইবড) না হয়, সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ অনুযায়ী শেয়ার পাবেন। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি আইপিও আবেদনে ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে বলে জানা গেছে, যেখানে খুব বেশি তফাৎ থাকবে না।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, আইপিও আবেদনের নতুন এ পদ্ধতিটি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আইপিও থেকেই চালু করা হতে পারে। বর্তমানে প্রাইমারি বাজার চাঙ্গা হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন নামে একাধিক বিও হিসাব খুলে শুধু আইপিও আবেদন করে থাকে। এমন অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যারা শত শত বিও হিসাব পরিচালনা করে আইপিও শিকার করেন। এমন প্রবণতা ঠেকাতে এসইসি আইপিও শেয়ারে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম বিনিয়োগ রাখার শর্ত প্রয়োগ করতে পারে।

বিএসইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইপিওর এ নতুন পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য আরও যাচাই-বাছাই করা হবে, সংশ্লিষ্টদের মতামতও নেওয়া হবে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে যোগ্য ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবস্ক্রিপশন একই সময়ে নেওয়া হবে।

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম জানান, বর্তমান পদ্ধতির কারণে অনেকেই আবেদন করার পরও শেয়ার না পাওয়ায় হতাশ হয়ে আবেদন করাই ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আবেদনকারী সবাই যাতে শেয়ার পান, সেজন্য আইপিওর বিষয়টি নিয়ে এসইসি কাজ করছে। সব আবেদনকারীর শেয়ার প্রাপ্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি আইপিও পদ্ধতিতে সময় কমিয়ে আনার জন্যই এটি করা হচ্ছে।

আগামী বুধবার এ বিষয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সিডিবিএলের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি বৈঠক হবে, সেখানে একটি ফ্রেমওয়ার্ক দাঁড় করানো হতে পারে। কমিশন বিষয়টি মূল্যায়ন করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিতে পারেন বলে জানান রেজাউল করিম। যত দ্রুত সম্ভব নতুন পদ্ধতিটি চালু হবে।

আইপিও লটারি পরিচালনা ও শেয়ার বিতরণে বিলম্বের কারণে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রাইমারি বাজারে আটকে যাওয়ায় এসইসি লটারি পদ্ধতিটি বাতিল করতে যাচ্ছে বলে এসইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। লটারি বাতিল করে নতুন পদ্ধতি চালু হলে আইপিও সাবস্ক্রিপশনের সময় কমিয়ে আনা যাবে বলেও তারা মনে করছেন।