শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে লভ্যাংশ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। পর্যাপ্ত মুনাফা ও রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আবার কোনো কোনো কোম্পানি নামমাত্র লভ্যাংশ দিচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ব্যত্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিপরীতে ক্যাপিটাল ও ডিভিডেন্ড গেইনের অধিকার আদায়ের দাবিতে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যেসব কোম্পানি ভালো রিজার্ভ ও মুনাফা থাকা সত্ত্বেও যুক্তিসঙ্গত লভ্যাংশ দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) তাগিদ দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

তথ্য মতে, জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছেরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও বেশকিছু কোম্পানি ‘না ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা দিয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, জেনারেশন নেক্সট, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, সায়হাম টেক্সটাইল, সায়হাম কটন, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, সাফকো স্পিনিং, জিল বাংলা সুগার মিলস, মালেক স্পিনিং, জুট স্পিনার্স, মেঘনা পেট, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যারামিট সিমেন্ট, শ্যামপুর সুগার, দুলামিয়া কটন, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, উসমানিয়া গ্লাস, অ্যাপেক্স ওয়েভিং, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও গোল্ডেন হার্ভেস্ট অ্যাগ্রো।

আর নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে বেশকিছু কোম্পানি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রিং শাইন টেক্সটাইল, ইয়াকিন পলিমার, দেশ গার্মেন্টস, খান ব্রাদার্স, ফার কেমিক্যাল, বিডি অটোকারস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, সালভো কেমিক্যাল, মোজাফফর হোসাইন, শাইনপুকুর সিরামিকস, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, আজিজ পাইপস, কে অ্যান্ড কিউ ও আরডি ফুড।

এছাড়া রিজার্ভ ভালো থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দেয়নি বেশকিছু কোম্পানি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, নর্দান জুট, অ্যড‌ভেন্ট ফার্মা, এনভয় টেক্সটাইল, শাশা ডে‌নিমস ও ডরিন পাওয়ার।

জানা গেছে, গোল্ডেন হারভেস্টের সর্বশেষ ইপিএস হয়েছে ০৪ পয়সা। চলতি হিসাব বছরে কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস ছিল ৬০ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪১ পয়সা, তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছে ০৪ পয়সা। আর ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ২.০৩ টাকা।

ফলে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির ইপিএস আশঙ্কাজকহারে কমেছে। এছাড়া কোম্পানিটি ২০১৯ সালে রাইট ইস্যুর মাধ্যমে ৭৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। এরপরও কোম্পানি ২০২০ সালের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। ফলে কোম্পানির রাইটের টাকার অপব্যবহার ও ইপিএস প্রতারণা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়া নর্দান জুট ইপিএস হয়েছে ১১.৩৩ টাকা। কোম্পানির মোট আয় হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ। রিজার্ভ ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কোম্পানিটি ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আর খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের সমাপ্ত হিসাব বছর শেষে লোকসান হয়েছে ০.৩৬ টাকা। কোম্পানির রিজার্ভ রয়েছে ১৭ কোটি ২ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ০.২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

এ বিষয়ে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের কোম্পানি সচিব বলেন, করোনার কারণে কোম্পানি লোকসানে রয়েছে। ফলে আগের রিটেইন আর্নিং অনুযায়ী কোম্পানি ০.২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কোম্পানি সচিব শাহাত হোসেন পাটোয়ারী বলে, কোম্পানি মুনাফায় থাকলেও রিটেইন আর্নিং নেতিবাচক রয়েছে। ফলে কোম্পানি রিজার্ভে টাকা রেখেছে। এজন্য কম লভ্যাংশ দিয়েছে। এদিকে গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রোর কোম্পানি সচিব নির্মল চন্দ্র সরকার বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা করছে না। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কাঙ্ক্ষিত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং রিজার্ভ অর্থ লুটপাটের পাঁয়তারা করছে কোম্পানিগুলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পুঁজিবাজারে বেশকিছু কোম্পানির ইপিএস ও রিজার্ভ ভালো রয়েছে। কিন্তু তারা লভ্যাংশ দিচ্ছে না। কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারাণ ও দুর্নীতি করেছে। এতে বিনিয়োগকারী ক্ষোভে ফুঁসছেন। আর পুঁজিবাজার অস্থিতশীল হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এদিকে, বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির লভ্যাংশ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করায় বিমা খাতে তালিকাভুক্ত এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদকে বিএসইসিতে তলব করা হয়। এছাড়া রিজার্ভ ভালো থাকা সত্ত্বেও কম লভ্যাংশ দেওয়ায় এনভয় টেক্সটাইলকে লভ্যাংশ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয়গুলো বিএসইসির পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিষয়ে বিএসইসি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।