শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: রকিবুর রহমান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বতর্মান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি। এর আগেও তিনি একাধিকবার এসব পদ অলঙ্করিত করেছেন। সম্প্রতি তিনি পরিচালক পদে পুন:নির্বাচিত হয়েছেন। কথা হয় পুঁজিবাজারের এই গুণি বিশেষজ্ঞ’র সঙ্গে। করোনা পরিস্থিতিতে কি করণীয়? কিভাবে এই মন্দাভাব কাটিয়ে উঠা সম্ভব সেসব সম্পর্কে তিনি খেলামেলা কথা বলেছেন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সাথে।

দেশ প্রতিক্ষণ: সরকারের কাছে আপনি যে সুদ সহায়তা চেয়েছেন তা কি আপনার কাছে পর্যাপ্ত বলে মনে করেন ?

রকিবুর রহমান: বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি একে অবশ্যই পর্যাপ্ত মনে করবো। সরকার যদি ৫ শতাংশ সুদ সহায়তা দেন। তাহলে অবশ্যই তা কাজে লাগানো সম্ভব। এটা সব ধরণের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নয়। আমি শুধু বলেছি যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, যারা মার্জিন প্রাইসের নিচে আছেন ও কর্মসংস্থান নেই তাদের জন্য। আগামী এক বছর তারা এই সহায়তা পেলে আশা করি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

এটা কোটিপতিদের জন্য কোন সহায়তা নয়। এখন সরকার যে সাহায্য সহযোগিতা করছে, ত্রাণ দিচ্ছে, তা কোটিপতিদের জন্য নয়, গরীব অসহায়দের জন্য। এখন দেশের অবস্থা ভালো না, এটা সবাইকেই বুঝতে হবে। এখন ব্যালেন্স করেই চলতে হবে। ব্যালেন্স করা না গেলে দুভির্ক্ষ হবে। সরকারের এই দিকে নজর দেয়া উচিৎ। দেশের পুঁজিবাজার টিকিয়ে রাখতে হলে এটা করতে হবে।

দেশ প্রতিক্ষণ: প্রণোদনা কতটুকু প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

রকিবুর রহমান: প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন কোন শেয়ার ফ্লোর প্রাইজের নিতে নামতে পারবে না। এটা এটা যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত। এতেও পুঁজিবাজার বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়া থেকে বেচে যাবে। ভারত আমেরিকা এভাবে চলছে। তারা তাদের শেয়ার মার্কেটকে বিভিন্ন সহায়তা ও প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে মার্কেট স্থিতিশীল রয়েছে। আমাদেরও তাই এই পরিস্থিতিতে প্রণোদনার কোন বিকল্প নেই।

দেশ প্রতিক্ষণ: করোনার এই সমস্যা থেকে পুঁজিবাজারকে কাটিয়ে উঠতে হলে কি করা উচিৎ বলে মনে করেন?

রকিবুর রহমান: আমি বলবো, আগামী ১০ তারিখ থেকে স্বল্প পরিসরে স্টক এক্সচেঞ্জ খুলে দেয়া উচিত। নইলে শেয়ারবাজার বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বে। সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন হবে। আর যদি এখন ১০ তারিখ পুঁজিবাজার খুলে দেয়া হয়। যাতে সবাই ফোনে ও অনলাইনে শেয়ার কেনাবেচা করতে পারে।

দেশ প্রতিক্ষণ: করোনার অবস্থায় পুঁজিবাজার চালু করলে কিভাবে চালু করা উচিৎ বলে মনে করেন?

রকিবুর রহমান: এখন সকাল ৯টা থেকে যদি স্টক মার্কেট চালু রাখে, অল্প লোকবল নিয়ে, তাহলে ১২টার মধ্যে কেনাবেচা শেষ করা সম্ভব। ১১টা থেকে সেটেলমেন্ট করলেই হবে। তবে কাউকে হাউজে আসতে দেয়া হবে না। শুধুমাত্র ওভার ফোনে ও অনলাইনে এই কেনাবেঁচা চলবে।

দেশ প্রতিক্ষণ: ব্রোকার হাউজে এখন কর্মী ছাটাই হতে পারে এই বিষয়ে কিছু ভেবেছেন?

রকিবুর রহমান: হ্যা, ব্রোকার হাউজগুলোর এই মাসে কোন ব্যবসা হয়নি। তারা হয়তো তাদের কর্মীদের এ মাসের বেতন দিতে পারবে। কিন্তু সামনের মাসের বেতন তারা দিতে পারবে না। তখন অনেক ছাটাইও যাতে করতে না হয় তাই আমি ১০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা চেয়েছি। এটা বাজারের স্বার্থে আমার এই চাওয়া। এটা দিয়ে তারা বেতন ভাতা দিয়ে টিকে থাকতে পারবে।

দেশ প্রতিক্ষণ: পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, আমরা যদি অটোমেশনে থাকতে পারতাম তাহলে মার্কেট বন্ধ রাখতে হতো না, এর দায়ভার কে নেবে?

রকিবুর রহমান: হ্যা, আমরা এখনো অটোমেশনে যেতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের ভালো কোন অ্যাপস নেই, স্ট্রং বন্ড মার্কেট নেই, এখনো এসেম্বেলি বোর্ড চালু করতে পারিনি, সিসিপি চালু করতে পারিনি, এসএমই বোর্ড চালু করতে পারিনি, এগুলোর দায়ভার আমাদের নীতি নির্ধারকদের, আমাদেরও। তবে এখন কাজ চলছে, হবে। এগুলো থাকলে আমরা আরো ভালো অবস্থানে থাকতাম।

দেশ প্রতিক্ষণ: এখনই কেন বাজার খুলে দেয়া প্রয়োজন?

রকিবুর রহমান: অনেকের কাছে কোটি কোটি টাকা আছে, মার্কেটের অবস্থা তারা অবজার্ভ করছে। তারা যদি শেয়ার না কিনতে পারে তাহলে হবে না। তাদেরকে সুযোগটা দিতে হবে। তারা বিনিয়োগ করবে। তাহলে মার্কেট স্থীতিশীল থাকবে। পরে তাদের দেখাদেখি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আসতে পারবে, কিনতে পারবে। আমি সবসময় ওয়ারেন বাফেটের কথা বলি। তিনি এই শেয়ার ব্যবসা করেই পৃথিবীর সেরা ধনীদের একজন হয়েছেন। তিনি সবসময় যখন মার্কেটের খারাপ সময় থাকে তখন শেয়ার কিনতেন। আর ভালো সময়ে, চাঙ্গা সময়ে শেয়ার বিক্রি করতেন।

তাই বলবো এখন মন্দার সময়, এখন মার্কেট খুললে অনেকের কাছে কোটি কোটি টাকা আছে, তারা বিনিয়োগ করতে পারবে। এখনই বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট সময়। এজন্যই মার্কেট খুলে দেয়া উচিৎ। তাদের দেখাদেখি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আসতে পারবে, কিনতে পারবে। আমি সবসময় ওয়ারেন বাফেটের কথা বলি। তিনি এই শেয়ার ব্যবসা করেই পৃথিবীর সেরা ধনীদের একজন হয়েছেন। তিনি সবসময় যখন মার্কেটের খারাপ সময় থাকে তখন শেয়ার কিনতেন। আর ভালো সময়ে, চাঙ্গা সময়ে শেয়ার বিক্রি করতেন।

তাই বলবো এখন মন্দার সময়, এখন মার্কেট খুললে অনেকের কাছে কোটি কোটি টাকা আছে, তারা বিনিয়োগ করতে পারবে। এখনই বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট সময়। এজন্যই মার্কেট খুলে দেয়া উচিৎ। তাদের দেখাদেখি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পরে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে শেয়ার কিনে দীর্ঘদিন ধরে রাখতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। ভালো সময়ে আবার বিক্রি করে দিতে হবে।

দেশ প্রতিক্ষণ: ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এই মন্দা পরিস্থিতিতে কি করতে পারে?

রকিবুর রহমান: এখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সময় নয়, এখন বড় বিনিয়োগকারীদের সময়। বড় বিনিয়োগকারীরা এখন শেয়ার কিনে শেয়ার মার্কেট চাঙ্গা রাখবে। তাদের দেখা দেখি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পরে আসবে।

দেশ প্রতিক্ষণ: ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী যারা লোকসানে আছে তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?

রকিবুর রহমান: যারা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করে লোকসানে খেয়েছে, তাদের জন্যই আমি সুদ সহায়তার কথা বলেছি। তারা যাতে এই অর্থনৈতিক মন্দা সময়টা কাটিয়ে উঠতে পারে। তাদের জন্য আমার পরামর্শ এখন ধৈর্য্য ধরে থাকতে হবে। বাজার চাঙ্গা হলে তবেই শেয়ার বিক্রি করতে হবে। নইলে লোকসানের পরিমান আরো বাড়বে। আর রাতারাতি বড়লোক হতে চাইলে হবে না।

দেশ প্রতিক্ষণ: আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি কিরকম বলে মনে করেন?

রকিবুর রহমান: অর্থনৈতিক মন্দা কোন দেশ কত তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠতে পারে এটাই চ্যালেঞ্জ, এখন প্রাইভেট সেক্টরও ঠিকমতো আগাতে পারবে না। যে দেশ যত দ্রুত এই বিশ্বমন্দা কাটিয়ে উঠতে পারবে তারাই লাভবান থাকবে। ২০২১ সালের আগে আমাদের এই মন্দা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না।

দেশ প্রতিক্ষণ: দীর্ঘমেয়াদী পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে করনীয় কি?

রকিবুর রহমান: দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে পুঁজিবাজারে সুশাসন কায়েম করতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জ এর ম্যানেজমেন্ট শেয়ার হোল্ডার, ট্রেড হোল্ডারদের কাছ থেকে প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে, দক্ষ অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। কার্যক্রম আরো অনেক বাড়াতে হবে। বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করতে হবে। শুধু ইকুইডি মার্কেটের উপর নির্ভর করে একটি মার্কেট কখনো দাড়াতে পারে না। অডিট রিপোর্টে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। নতুন কোম্পানি বাজারে আসার আগে অনেক ভুল তথ্য দেয়। তাদেরকে পরবর্তীতে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তারা যে টাকা দেখিয়ে মার্কেটে আসে, তার ট্যাক্স ঠিকমতো দিয়েছে কিনা, দিলে কোন ব্যাংক এর মাধ্যমে দিয়েছে সব অডিট ভালো করে করতে হবে। কোন ব্যাক্তি বা গোষ্টির স্বার্থে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেয়া যাবে না। তাহলেই সুশাসন টিকে থাকবে, মার্কেটে জালিয়াতি কম হবে। মার্কেট দীর্ঘ সময় স্থীতিশীল থাকবে।

পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে কি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবে না?

রকিবুর রহমান: বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই আমাদের শেয়ারমার্কেটে আসতে চায়, তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। মার্কেট স্থিতিশীল থাকলে তারা সবসময়ই আসবে। তাদের নিয়ে আমাদের চিন্তা না করলেও চলেব। আগে নিজের মার্কেট ঠিক রাখতে হবে। তাহলে বিনিয়োগকারীর অভাব হবে না।

আপনার মুল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, দেশ প্রতিক্ষণকে ধন্যবাদ।