শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: মাত্র ছয় লাখ টাকায় গ্রাহকদের জন্য সিকিউরিটিজ কেনাবেচার ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) পাওয়া যাবে। তবে এ ট্রেক পেতে হলে স্টক এক্সচেঞ্জে জামানত হিসেবে দুই কোটি টাকা রাখতে হবে। আর ট্রেক নিতে আগ্রহী কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম তিন কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে।

এমন বিধান রেখে ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০’ খসড়া করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। আইনটি চূড়ান্ত হলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান ব্রোকারেজ ব্যবসা করতে পারবে।

সর্বসাধারণের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজ ব্যবসা উন্মুক্ত করতে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে এসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন পদক্ষেপে তুলনামূলক কম মূল্যে ব্রোকারেজ লাইসেন্স পাওয়া যাবে। ২০১০ সালের চাঙ্গা বাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো কোনো ব্রোকারেজ হাউজ শতকোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ ছয়টি ট্রেক বিক্রি করে ৩০ কোটি টাকা দরে। তবে আইন চূড়ান্ত হওয়ার পর স্বল্পমূল্যে ট্রেক পাওয়ার সুযোগ পেলেও তারা স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা পাবে না।

২০১৩ সালের স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথককরণ) আইনে ২০১৬ সাল থেকে নতুন ট্রেক ইস্যুর কথা রয়েছে। তবে বাজার পরিস্থিতি ও স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তুতি না থাকায় ২০২০ সালে ট্রেক ইস্যু-সংক্রান্ত আইন তৈরির উদ্যোগ নিল এসইসি। কমিশন মনে করছে, নতুন ট্রেক ইস্যু হলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে এবং এর ফলে বিনিয়োগকারীরা আরও ভালো সেবা পাবেন।

ব্রোকারেজ ব্যবসা উন্মুক্ত করতে ২৫ মার্চ এ-সংক্রান্ত খসড়া প্রকাশ করে এসইসি, যা জনমত যাচাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এ জন্য আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে অংশীজনদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছে এসইসি। মতামতে খসড়ার কোনো বিষয়ে আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে। অবশ্য করোনাভাইরাসের কারণে নির্ধারিত সরকারি ছুটি ৪ এপ্রিল থেকে আরও বাড়লে, মতামত পাঠানোর সময়ও বাড়বে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০’ খসড়া অনুযায়ী যেকোনো কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশনের অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক কিনতে পারবে। এই ট্রেক পাওয়ার জন্য এক লাখ টাকা ফিসহ এক্সচেঞ্জে আবেদন করতে হবে। আর পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে নিবন্ধন ফি হিসেবে।

অর্থাৎ ছয় লাখ টাকায় গ্রাহকদের পক্ষে সিকিউরিটিজ কেনাবেচা করে দেওয়ার ব্যবসা করতে ট্রেক পাওয়া যাবে। তবে এই ট্রেকের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার হবেন না। শুধু সিকিউরিটিজ বেচাকেনা করার সুযোগ পাবেন। যে ট্রেকহোল্ডারকে প্রতি বছর এক লাখ টাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে ফি দিতে হবে। এক্সচেঞ্জ কর্তৃক প্রদত্ত ট্রেক কোথাও বন্ধক রাখা যাবে না।

ট্রেক পেতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম তিন কোটি টাকা থাকতে হবে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক নিরীক্ষিত নিট সম্পদের পরিমাণ পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশের বেশি থাকতে হবে। আর স্টক এক্সচেঞ্জে দুই কোটি টাকা বা কমিশন কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত অর্থ জামানত হিসেবে রাখতে হবে। এ হিসাবে ছয় লাখ টাকায় ট্রেক পাওয়ার জন্য আরও কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।

কোনো প্রতিষ্ঠান ট্রেক পেলে তা হস্তান্তরযোগ্য নয় বলে খসড়ায় বলা হয়েছে। নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুযায়ী স্টক-ডিলার বা স্টক-ব্রোকারের সনদ নিতে হবে। এই সনদ নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না পারলে ট্রেক বাতিল হয়ে যাবে।