শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০১০ সালের ধসের পর দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দাবস্থা বিরাজ করে। সা¤প্রতিকালে পুঁজিবাজারে কিছুটা স্থিতিশীল ফিরতে শুরু করেছে। প্রতিদিন বাড়ছে লেনদেন, বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের বিচরণ, বাড়ছে শেয়ারদরও। এমনি ইতিবাচক বাজারে সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্বে স্বল্প মূলধনি, লোকসানি ও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প মূলধনি, লোকসানি ও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়াটা পুঁজিবাজারের জন্য সুখকর নয়। তবে পুঁজিবাজারে এখনো বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ার বিনিয়োগ উপযোগি বলে তারা মনে করেন। কারণ বাজারের সার্বিক প্রাইস আর্নিং (পিই) রেশিও বা মূল্য আয় অনুপাত অতীতের তুলনায় এখনও অনেক কম।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুঁজিবাজারের চাঙ্গাভাবে কাজে লাগিয়ে স্বল্প মূলধনি, লোকসানি ও দুর্বল মৌলভিত্তির ২৭ কোম্পানির শেয়ার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব কোম্পানির বর্তমান পিই (মূল্য আয়) রেশিও খুবই বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। ডেঞ্জারজোনে থাকা এ ৫৩টি কোম্পানির মধ্যে ২৭ কোম্পানি লোকসানে রয়েছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, ভাল ও মৌলভিক্তি কোম্পানি চেনার একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো কোম্পানির পিই রেশিও। যে কোম্পানির শেয়ারের পিই রেশিও যত কম, সে কোম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিও তত কম। আর যে কোম্পানির পিই রেশিও যত বেশি, সে কোম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিও তত বেশি।

তাদের মতে, কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ৪০ পয়েন্টের নিচে থাকলে তাকে বিনিয়োগের জন্য মোটামুটি নিরাপদ মনে করা হয়। আর ৪০ পয়েন্টের ওপরে থাকা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকে অনিরাপদ বলে মনে করা হয়।

এদিকে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মার্জিন রুলস ১৯৯৯ অনুযায়ী, ৪০ পয়েন্টের ওপরে অবস্থানকারী কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মার্জিন সুবিধা প্রদানে নিষেধারোপ করা হয়েছে।

অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচনায়ও পিই রেশিও ৪০ পয়েন্টের নীচে থাকা কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ। আর ৪০ পয়েনেটর ওপরে থাকা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ অনিরাপদ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বর্তমানে লোকসানি কোম্পানির সংখ্যা ৩০টি। এর মধ্যে ২৫ কোম্পানি বেশি ঝুঁকিপূর্ন তালিকায়। তাই প্রকৃতিগতভাবে লোকসানি কোম্পানির শেয়ার স্থায়ীভাবেই ডেঞ্জারজোনের অধিবাসী। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা মানে অনিশ্চিত গন্তব্যে বিনিয়োগ করা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫৬টি কোম্পানির মধ্যে সর্বশেষ অর্থবছরের ব্যবসায় ২৭ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে লোকসানে সবার ওপরে রয়েছে শ্যামপুর সুগার মিলস। কোম্পানিটির সর্বশেষ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯৩.৮২ টাকা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ারপ্রতি লোকসান করা কোম্পানিটি হচ্ছে জিল বাংলা সুগার মিলস। এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮০.৮২ টাকা। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) হয়েছে ৬৯.৫৫ টাকা লোকসান।

লোকসানি অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে: গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫২.৭৫ টাকা। এছাড়া নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ১৭.১৫ টাকা, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৭.৯৭ টাকা, মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের ৭.৮৯ টাকা, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৫.৭২ টাকা, বাংলাদেশ সার্ভিসেসের ৫.৬৭ টাকা, জিকিউ বলপেনের ৫.১২ টাকা, আরামিট সিমেন্টের ৪.৫৬ টাকা,

দুলামিয়া কটনের ৪.০৪ টাকা, বেক্সিমকো সিনথেটিক্সের ৩.১২ টাকা, মিথুন নিটিংয়ের ২.২৪ টাকা, খুলনা প্রিন্টিংয়ের ১.২২ টাকা, তাল্লু স্পিনিংয়ের ১.১৩ টাকা, গোল্ডেন সনের ১.০৪ টাকা, হাক্কানি পাল্পের ০.৯৬ টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ০.৬১ টাকা, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ০.৫৭ টাকা,

ইমাম বাটনের ০.৪ টাকা, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের ০.৩৯ টাকা, বিচ হ্যাচারির ০.৩৭ টাকা, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ডের ০.১৮ টাকা, ইস্টার্ন ক্যাবলসের ০.১৪ টাকা, ফেমিলিটেক্সের ০.০৭ টাকা ও সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক ফান্ডের ০.০২ টাকা লোকসান হয়েছে।

উল্লেখ্য, যেসব কোম্পানির সর্বশেষ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব প্রকাশ হয়নি এবং বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়নি, সেসব কোম্পানি কেডিএসই কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেয়নি। ফলে আগের বছরে লোকসান করলেও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আর্থিক প্রকাশ না করা কোম্পানি সমূহকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।