ফয়সাল মেহেদী : শেয়ারপ্রতি বর্তমান বাজারদর ও শেয়ারপ্রতি আয় বিবেচনায় খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের অর্ধেকের বেশি কোম্পানি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন,  বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মূল্য আয়ের অনুপাত বা  পিই রেশিও ১৫ থেকে ২০ পর্যন্ত অনেকটা নিরাপদ। পিই রেশিও এর উপরে যত উঠবে ততই ঝুঁকি বাড়বে। আর ঝুঁকি এড়াতে পিই রেশিও পাশাপাশি কোম্পানির মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয়, শেয়ার প্রতি নিট সম্পদের পরিমাণ, নিয়মিত সাধারণ সভা (এজিএম) করা, ডিভিডেন্ড প্রদান ও ডিভিডেন্ডের হার ইত্যাদি বিবেচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ।

এদিকে ৪০ পর্যন্ত পিই রেশিও নিরাপদ মনে করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর উপরের পিইধারী কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য মার্জিন ঋণ প্রদানে সংস্থাটির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অর্থাৎ ৪০ -এর উপরের পিইধারী কোম্পানিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই ৪ এপ্রিল লেনদেন শেষে খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের যে কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও ৪০ -এর উপরে কিংবা নেগেটিভ বা ঋণাত্বক রয়েছে সে কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতে বর্তমানে ১৮টি কোম্পানি রয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও বিবেচনায় এর মধ্যে ১০টি কোম্পানিই বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শতকরা হিসাবে যা ৫৫.৫৬ শতাংশ। এদিকে কোম্পানিগুলোর মধ্যে আবার ৭টি কোম্পানি বর্তমানে লোকসানে রয়েছে। অথচ অধিকাংশ সময়ে কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা যায়। ফলে অস্বাভাবিক বাড়তে দেখা যায় কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর। তবে দর বাড়ার পেছনে দৃশ্যমান কোনো কারণ না থাকায় কোম্পানিগুলোকে ঘিরে কারসাজির অভিযোগ নতুন নয়। ধারনা করা হয় কারসাজি চক্রের ফাঁদে পড়ে গুজবে বা হুজুগে মেতে লাভের আশায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করেন। যার শেষ পরিনতি লাভের পরিবর্তে লোকসান বৃদ্ধি।

প্রসঙ্গত, শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ঋণাত্বক থাকার পরেও অস্বাভাবিকভাবে লেনদেন ও শেয়ারদর বাড়ায় গত বছরের শেষ দিকে কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬টি কোম্পানির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো বিএসইসি। জানা গেছে, ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, এ খাতের অ্যাপেক্স ফুডস লিমিটেডের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১০৭.৫০। আর সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোকসান থাকায় পিই রেশিও নেগেটিভ বা ঋণাত্বক।

এ খাতের বঙ্গজ লিমিটেড লোকসানে থাকায় নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ শেয়ারের পিই রেশিও নেগেটিভ বা ঋণাত্বক। সর্বশেষ প্রকাশিত অর্ধবার্ষিকে এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.৩০ টাকা। আর সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.৩৮ টাকা।

এদিকে অর্ধবার্ষিকে বিচ হ্যাচারির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ০.২২ টাকা। কোম্পানির অনিরীক্ষিত এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিই রেশিও নেগেটিভ বা ঋণাত্বক। এ খাতের এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ২১২.৮৬। অর্ধবার্ষিকে এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ০.০৭ টাকা এবং শেয়ারটির বর্তমান বাজারদর ২৯.৮০ টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে জেমিনি সী ফুড শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দেখিয়েছে ৭.১৮ টাকা। এ কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান বাজারদর ৬৩৪ টাকা। সে হিসাবে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৪৪.১৫।

এ ছাড়া সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত ও চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ প্রকাশিত অর্ধবার্ষিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে লোকসানে থাকায়, এ খাতের মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, রহিমা ফুড, শ্যামপুর সুগার মিলস ও জিল বাংলা সুগারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও রয়েছে নেগেটিভ বা ঋণাত্বক অবস্থানে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমদ বলেন, কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ২০-এর উপরে গেলে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে রিটার্ন পেতেও অনেক সময় লাগে। অবশ্য ভবিষ্যতে কোম্পানি ভালো করবে এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য যদি থাকে তাহলে পিই রেশিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও কোনো কোনো সময় শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়তে পারে। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোম্পানির মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস এবং বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।