bsec-dseআরিফুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস থেকে টানা উত্থানের মধ্যে রয়েছে। এরইমধ্যে সূচক ও আর্থিক লেনদেন কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। একইসঙ্গে অসংখ্য কোম্পানির শেয়ার দরও বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এতে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের শঙ্কা বাড়ছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে কিছু কিছু লোকসানী কোম্পানির হঠাৎই মুনাফার উল্লম্ফন এবং টানা দরবৃদ্ধিতে বাজারের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা। ফলে তালিকাভুক্ত ৪০ কোম্পানিটির উপর কোন নজরধারী নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ন্ত্রন কাদের হাতে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগেই অধিকাংশ দুর্বল কোম্পানির সাথে সম্পৃক্তরা শেয়ার হস্তগত করেছে। ফলে, ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগেই দর বাড়তে শুরু করেছিল ঐসব কোম্পানিটির। যা ইনসাইডার টেডিংয়ের আওতায় পড়ে।

যেমন হিসেবে তারা বলেন, টানা দুই বছরে ফাইন ফুডের শেয়ারে লোকসানি থাকার পর সদ্য সমাপ্ত বছরে তৃতীয় প্রান্তিকেও লোকসানি থাকা কোম্পানিটির মুনাফায় উল্লম্ফন ও তার আগ থেকে শেয়ার দরের টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় কারসাজির মদদ দিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তাই অতিদ্রুত কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

দেখা গেছে, গত ২ মাসে বা ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৪০টি কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বেড়েছে। যেসব কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোন কারণ নেই বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্তে উঠে এসেছে। এদিকে অস্বাভাবিকভাবে শেয়ার দর বৃদ্ধি পাওয়া ৪০ কোম্পানির মধ্যে ১৮টিই ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি।

এ ছাড়া ৮ কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি নিয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তথ্য প্রকাশ করেছে। অপরদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৭ কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে তদন্তে নেমেছে।

অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো হল- কে অ্যান্ড কিউ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, ফারইষ্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, আইসিবি, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, ন্যাশনাল টি, নাভানা সিএনজি, পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিডি অটোকারস, ইফাদ অটোস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, জিপিএইচ ইস্পাত, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, শমরিতা হসপিটাল, পেনিনসুলা চিটাগাং, মাইডাস ফাইন্যান্স, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, সমতা লেদার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, গোল্ডেন সন, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স, আরএন স্পিনিং মিলস, ডেফোডিল কম্পিউটার্স, এমারেল্ড অয়েল, গোল্ডেন হার্ভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ,

আরএসআরএম স্টিল, রহিমা ফুড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, এবি ব্যাংক, শাশা ডেনিমস, শ্যামপুর সুগার মিলস, ইমাম বাটন, ঝিল বাংলা সুগার মিলস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, এইচআর টেক্সটাইল ও ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং। এর মধ্যে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো হলো- কে অ্যান্ড কিউ, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স,

পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিডি অটোকারস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইডাস ফাইন্যান্স, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, সমতা লেদার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স, আরএন স্পিনিং মিলস, রহিমা ফুড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, শ্যামপুর সুগার মিলস, ইমাম বাট ও ঝিল বাংলা সুগার মিলস।

অস্বাভাকাবিক দরবৃদ্ধি নিয়ে একাধিকবার তথ্য প্রকাশ করা কোম্পানিগুলো হলো- শ্যামপুর সুগার মিলস, ইমাম বাটন, ঝিল বাংলা সুগার মিলস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, এইচআর টেক্সটাইল, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ও ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং।
এদিকে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি কারণে ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৭ কোম্পানি নিয়ে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। গত ৬ ডিসেম্বর বিএসইসির ৫৯২তম কমিশন সভায় এ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কোম্পানিগুলো হলো- রহিমা ফুড, ফাইন ফুডস, বিডি অটোকারস, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ, ঝিল বাংলা সুগার মিলস, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ এবং শ্যামপুর সুগার মিলস। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ঋণাত্মক।

এ বিষয় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান মজুমদার জানান, কারণ ছাড়া যখন কোন কোম্পানির দর বৃদ্ধি পায় তখন অবশ্যই ঝুঁকির সৃষ্টি করে। এতে বিনিয়াগকারীরা লোকসানের কবলে পড়তে পারে। আর ৪০ কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া ছোট বিষয় না। এটা শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশ।

তিনি আরও জানান, বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন করানোর জন্যই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়। তাই এক্ষেত্রে ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে।

অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, ধস পরবর্তী পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে এটা সত্যি। আরো কাজ হচ্ছে। এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সক্ষমতাও বেড়েছে। তাছাড়া এতোদিন বিনিয়োগকারীদের জ্ঞানের অভাবের যে অভিযোগ ছিল তা দূর করার জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তবে তিনি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেন, বর্তমান বাজারে ভাল কোম্পানির শেয়ারদর যেমন বেড়েছে খারাপ কোম্পানির শেয়ারদর আরো বেশি বেড়েছে। তাই কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ শেয়ার সেটা বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত। অতিমূল্যায়িত শেয়ার থেকে দূরে থাকার জন্য বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেন তিনি।