risk-359x201শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৭ কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিতে দু:চিন্তায় পড়েছেন বিনিয়োগকারী সহ বাজার সংশ্লিষ্টরা। এসব কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে ডেঞ্জার জোনে অবস্থান করেছে, পাশাপাশি এসব কোম্পানির কারনে বাজারকে ফেলেছে ঝুঁকিতে। তবে এসব কোম্পানির কারসাজিতে কারা জড়িত, নিয়ন্ত্রন সংস্থার তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া উচিত। কারন ৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। কোন কোন কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ গুন বাড়ছে।

তেমনি তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারে না এই কোম্পানি। ৫৫ কোটি পরিশোধিত মূলধনের এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক ঋণ ৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ টাকার শেয়ার যিনি কিনছেন, তার ঘাড়ে প্রায় ১৮ টাকার ঋণের দায় চাপছে।

এরপরও কোনো কারণ ছাড়াই গত এক সপ্তাহে দুর্বল মৌল ভিত্তির এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৩১ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ১৪ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।

এভাবেই মৌল ভিত্তি উপেক্ষা করে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এরমধ্যে অধিকাংশই লোকসানি কোম্পানি। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত এরা বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এরপরও বাড়ছে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম। এরফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে পুঁজিবাজার।

সূত্র বলছে, বড় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ও কয়েকজন বড় বিনিয়োগকারী মিলে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে। এরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে। এর ফাঁদে পা দিচ্ছে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী।

ফলে ওই চক্রটি বাজার থেকে বের হয়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা পথে বসবেন। এ কারণে তদন্ত করে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ তাদের। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, কয়েকটি কোম্পানির ব্যাপারে তারা তদন্ত করছে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দুর্বল মৌল ভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কোম্পানির শেয়ারের দাম, তাদের মৌল ভিত্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে বুঝতে হবে এখানে কোনো কারসাজি আছে।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, শেয়ারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তদন্ত করে বিএসইসিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে,  সেগুলো দুর্বল মৌল ভিত্তির, লোকসানি ও ছোট মূলধনের কোম্পানি। এরমধ্যে শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ারের দাম গত দেড় মাসে ১৩ থেকে ২৪ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ৩০ কোটি টাকা লোকসান রয়েছে। আর প্রতি শেয়ারের বিপরীতে লোকসান ৬৯ টাকা। একই সময়ে জিলবাংলা সুগার মিলের শেয়ারের দর ২০ থেকে বেড়ে ৩৬ টাকায় উঠেছে। কিন্তু লোকসানি এই প্রতিষ্ঠানটির ১৩৭ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে।

অর্থাৎ মুদ্রা ও পুঁজি উভয় বাজারেই তারা সংকট সৃষ্টি করছে। গত দেড় মাসে মেঘনা কনডেন্স মিল্কের শেয়ার দর ৬ থেকে বেড়ে প্রায় ১০ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে মেঘনা পেটের শেয়ার দর ৫ থেকে বেড়ে ৭ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।

এক মাসে ফাইন ফুডসের শেয়ার দর ২০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। একই ভাবে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে বিডি অটোকার্স ও ইমাম বাটনের শেয়ার দর। এর আগে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল ডরিন পাওয়ার ও রহিমা ফুডের শেয়ারের দাম।

এছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হল- স্টাইল ক্র্যাফট, আজিজ পাইপ, কাসেম ড্রাইসেল, দেশ গার্মেন্টস, শাহজিবাজার পাওয়ার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, সোনালী আঁশ, অ্যাপেক্স স্পিনিং, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিস ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ৭টি কোম্পানির ব্যাপারে আমাদের তদন্ত চলছে। অন্যান্য বেশ কিছু কোম্পানি আমাদের নজরদারিতে আছে। তিনি বলেন, দাম বাড়লেই খারাপ বলা যাবে না। তবে আমরা দেখছি, দাম বৃদ্ধির পেছনে আসলেই কোনো যুক্তি আছে নাকি টেনে বাড়ানো হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যে ৭টি কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির তদন্ত চলছে সেগুলো হল- জিলবাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগার, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট, ইমাম বাটন, ফাইন ফুডস ও বিডি অটোকার্স।