শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের আর্থিক খাতে বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন সমস্যাগ্রস্ত ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানের এই বড়সড় রদবদল পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে, কারণ এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর অর্থ আটকে আছে।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটানো হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছে কোনো বার্তা না থাকায় পুঁজিবাজারে টানা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রায় দুই মাস ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। তবে বিস্ময়ের বিষয়, তাতে বিএসইসির কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিষয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তবুও স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এখনো এ বিষয়ে কোনো সরকারি ঘোষণা নেই। ফলে কোম্পানিগুলো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশ করতে পারছে না।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রেখে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা রক্ষায় এই ধরনের প্রক্রিয়ায় বিএসইসিকে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বা এনবিএফআই একীভূত বা বন্ধ হলে বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা ব্যবস্থা আগে থেকেই জানানো প্রয়োজন ছিল।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ খুব স্পর্শকাতর বিষয়। বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রাখা ঠিক হয়নি। তাদের স্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জকেই এগিয়ে আসা উচিত ছিল, কিন্তু সেটাও হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।

মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বসা হবে। অন্যদিকে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, বিষয়টি যখন তাদের কাছে আসবে, তখন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীদের অর্থ যেখানে আটকে আছে, সেখানে শুরু থেকেই তাদের প্রতিনিধি থাকা জরুরি। নইলে একীভূতকরণ ও বন্ধের সিদ্ধান্ত বাজারে আস্থাহীনতা বাড়াবে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।