bangladesh bankশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: অবশেষে পুঁজিবাজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নমনীয় সুর দেখা গেছে। এতদিন ব্যাংকগুলো এক্সপোজার সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন নিবেদন করেছে। এবার উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহায়তা নেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি তাগিদ দিয়েছে। খোদ গভর্নর বলেছেন, যত শিগগির সম্ভব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা নিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করুন।

এদিকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র ইতিবাচক মানষিকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রানালয়ের ইতিবাচক মানসিকতায় বাজারের লেনদেনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

তারা আরো বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার বিষয় নমনীয়। এটা পুঁজিবাজারের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক দিক। আশা করি ব্যাংকগুলো নীতি সহায়তা নিয়ে শিগরিই বাজার বিনিয়োগ শুরু করবে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার বলে তারা মন্তব্য করেছেন।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন আগে নানা দাবী আর সব মহলের প্রত্যাশা পূরন করে কোনো সার্কূলার জারি না করেই সেই ব্যাংকগুলোর চাওয়ার চেয়েও বেশি পূরন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষনা করেছিল বাড়তি নীতি সহায়তা।

সেই নীতি সহায়তার কারনে ইতিমধ্যে চারটি ব্যাংক পেয়েছে বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ। দুটি ব্যাংক সম্প্রতি নীতিসহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে। দুটি ব্যাংক বোর্ড মিটিং করে আবেদন করার পাইপ লাইনে আছে। আর দুটি ব্যাংক এখনো এই প্রক্রিয়াটি শুরুই করেনি। এই দুটি ব্যাংক নিয়েই এখন বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারন আগামি ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে তারা আবেদন না করলে ব্যাংক দুটি যেমন জরিমানার মুখোমুখি হবে তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকও পড়বে সমালোচানার মুখে।

এ চিন্তা করেই মঙ্গলবার ব্যাংকার্স মিটিং শেষে পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ(ওভার এক্সপোজার) সমন্বয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা নেওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাগাদা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ সুযোগ গ্রহণ করে বা অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্ব না করলে ব্যাংকগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়ার হুমকিও দিয়েছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে হবে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে। বিনিয়োগকারিদের সুবিধার জন্য অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি না করে বিনিয়োগ সমন্বয় করতে নীতি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন পর্যন্ত চারটি ব্যাংক এ সুবিধা গ্রহণ করেছে।দুটি ব্যাংক আবেদন করেছে আর দুটি ব্যাংকের আবেদন পাইপলাইনে আছে। এই হিসাবে বাকী আছে আর মাত্র দুটি ব্যাংক।

সেই ব্যাংক দুটি সম্পর্কে এসকে সুর বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী যারা ২১ জুলাইয়ের মধ্যে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করবে না তাদেরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। এছাড়া এখন পর্যন্ত সুবিধা নেওয়া ব্যাংকগুলো হলো এবি ব্যাংক, পূবালী, মার্কেন্টাইল ও মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড।

উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর ডিপ্লামা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, পুঁজিবাজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো নমনীয় হওয়ার আহ্বান। কারন অর্থনীতির একটি প্রধান খাত হিসেবে গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে। এখন পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা সময়ের প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো নমনীয় হতে হবে। অবশেষে মন্ত্রীর সেই কথা বাস্তবে ফলতে যাচ্ছে।

তৎসময়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, অর্থনীতির সব ক’টি খাতই এখন ঊর্ধ্বমুখী। পুঁজিবাজারও অর্থনীতির একটি প্রধান খাত। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী খুবই ইতিবাচক। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য সরকার সম্ভব সবকিছুই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, পুঁজিবাজারের মতো দেশের রিয়েল স্টেট খাতেও এ স্থবিরতা চলছে। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করা গেলে এর ইতিবাচক প্রভাব রিয়েল স্টেট সেক্টরেও পড়বে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত পুঁজিবাজারবান্ধব মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা।

পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার তাগিদ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এসব প্রতিষ্ঠান এ দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোম্পানিগুলোতে নাগরিকদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে এ দেশের সাধারণ মানুষও এ মুনাফার অংশ পাবেন।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীর এ্যাড. মাহামুদুল আলম বলেন, পুঁজিবাজার বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নমনীয় সিদ্ধান্ত বাজারের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আসবে। এছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগমুখী হলে দ্রুত লেনদেন বাড়বে। বাজার স্থিতিশীলতায় রুপ নেবে। ফলে গতিশীল হবে পুঁজিবাজার। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তিনি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি সাপোর্ট বাজারের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তরিকতায় পুঁজিবাজারের সুদিন আসছে।

স্টক অ্যান্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী প্রভাষক হোসাইন আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার বিষয় যে নমনীয়তার পরিচয় দিচ্ছে তা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে বিরল হয়ে থাকবে। আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবে না।