bankশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ পেল তিন ব্যাংক। শেয়ার বিক্রি না করেই  এ সমন্বয়ের সুযোগ পেলো। বেসরকারি এবি, পূবালী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ধারণকৃত শেয়ার ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের এক হাজার ১১৫ কোটি টাকা নতুন করে সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী কোম্পানির মূলধনে নিয়ে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংক তিনটির সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে সমন্বিত মূলধন তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে।

কোনো ব্যাংক এক সময় মোট দায়ের ১০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারত। তবে ২০১৩ সালে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে বিনিয়োগের সক্ষমতা কমিয়ে পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম হিসেবে রক্ষিত স্থিতি, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও অবণ্টিত আয়ের (রিটেইন্ড আর্নিংস) ২৫ শতাংশ বিনিয়োগের বিধান করা হয়।

যেসব ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ রয়েছে আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে তা নামিয়ে আনার কথা। বিনিয়োগ সমন্বয় করতে গিয়ে শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ বাড়ার আশঙ্কায় সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন পক্ষ। তবে আইন সংশোধন করে সময় না বাড়িয়ে বিকল্প উপায়ে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে গত ডিসেম্বরে সাবসিডিয়ারিতে সরবরাহ করা মূলধন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ হিসেবে না ধরার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সুবিধা পায় ব্যাংক। এরপরও ১০টি ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার ওপরে থাকায় নতুন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা নেওয়া তিন ব্যাংকের মধ্যে এত দিন পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজের মূলধন ছিল মাত্র ১৬০ কোটি টাকা। ধারণকৃত শেয়ার ও সাবসিডিয়ারিকে দেওয়া ঋণের ৫০০ কোটি টাকা নতুন করে পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজের মূলধনে স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এতে ব্যাংকটির সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মূলধন ৬৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। নির্ধারিত সীমায় নেমে এসেছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার ওপরে থাকা এবি ব্যাংক সিকিউরিটিজের মূলধন ছিল ২৮০ কোটি টাকা। এখন আরও ৩২০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজের মূলধন ৬৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬০ কোটি টাকায় নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ২৯৫ কোটি টাকা সাবসিডিয়ারির মূলধনে স্থানান্তরের সুযোগে পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নেমে এসেছে।

জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ হালিক চৌধুরী বলেন, পূবালী ব্যাংকের কেনা কিছু শেয়ার ও নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে দেওয়া ঋণ সাবসিডিয়ারির মূলধনে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে শেয়ার বিক্রি না করেই বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ পাওয়া গেল। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আইন নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে বিক্রির ওপর যে চাপ তৈরির কথা শোনা যাচ্ছিল তা আর হবে না।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে সাবসিডিয়ারিতে সরবরাহ করা মূলধন বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য না করার সিদ্ধান্তের পর ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

বর্তমানে ১০টি ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার ওপরে থাকলেও ২০১৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের পর ৩৬টি ব্যাংকের বিনিয়োগ এ সীমার ওপরে ছিল। পর্যায়ক্রমে কমতে-কমতে এখনকার অবস্থায় এসেছে। দেশে কার্যরত মোট ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে কখনই শেয়ারবাজারে নতুন ও বিদেশি ৯টি করে ১৮টি ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার ওপরে ওঠেনি।

সরকারি মালিকানার বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কখনই পুঁজিবাজারে কোনো বিনিয়োগ করেনি। সুত্র: সমকাল