শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের ৭ কোম্পানি উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমানের ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে পুঁজিবাজারে ভালো অবস্থানে থাকলেও উল্টো চিত্র কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ধারায়। তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের এই ৭ কোম্পানির মধ্যে দুটি ‘এ’ ক্যটগরিতে থাকলেও ঋণ খেলাপির উর্ধগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। এই তালিকায় রয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরির আরও পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এই ৭ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে জিএসপি ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স, মাইডাস ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঝুঁকিতে রয়েছে জিএসপি ফাইন্যান্স লিমিটেড।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, জিএসপি ফাইন্যান্স এখন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ (মার্চ ২০২১) তথ্য বলছে, কোম্পানিটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৭৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১২১ কোটি। অর্থাৎ বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, ১০ শতাংশের অধিক খেলাপিভূভক্ত কোম্পানিগুলোর উপর কড়া নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত অপর কোম্পানির তালিকায় রয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্স। কোম্পানিটি দুই হজার ৭৩২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করলেও খেলাপি ঋণের হার ১৫ শতাংশের উপরে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ৪১৯ কোটি।

‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাস ফাইন্যান্স। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ৮৯ শতাংশ ঋণই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ এক হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতিও রয়েছে ফাস ফাইন্যান্সের। ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত আরেক কোম্পানির নাম মাইডাস ফাইন্যান্স। যাদের খেলাপি ঋণের হার ৩১ শতাংশের বেশি। ‘বি’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত প্রিমিয়ার লিজিং এর খেলাপি ঋণ প্রায় ৪৯ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্সের ১৫ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ১০.৮৫ শতাংশ।

জানা যায়, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বা তার বেশি ডিভিডেন্ড দিলে ওই কোম্পানি ‘এ’ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে কোম্পানিটি আগে থেকে ‘এ’ক্যাটাগরিতে থেকে থাকলে ডিভিডেন্ডের পরও সে ক্যাটাগরিতেই থেকে যায়। আর ‘বি’, ‘এন’অথবা ‘জেড’ ক্যটাগরিতে থাকলে ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার কারণে এ ক্যটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়। আর কোনো কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশের কম ডিভিডেন্ড দিলে ওই কোম্পানি ‘বি’ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি ‘এ’ ‘বি’ ‘এন’এবং ‘জেড’ এই চার ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন করে থাকে। তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের অবস্থানের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। কোম্পানির অবস্থার মধ্যে থাকে যথা সময়ে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা করা, সমাপ্ত বছর শেষে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা এবং ডিভিডেন্ডের পরিমাণ।

এ বিষয়ে এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার করার কারণেই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা সাময়িক সময়ের জন্য। অল্প সময়ের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আমাদের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির আরও একটা কারণ আছে। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ডেফারর্ড সুবিধার কয়েকটি আবেদন বাতিল করেছে। এ কারণেই খেলাপি ঋণ অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বাড়ছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। দেখেশুনে বিনিয়োগ না করলে যে কেউ লোকসান করবে। কারণ প্রত্যেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে খেলাপির বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়। কিন্তু প্রভিশনের পুরো টাকাটাই কোম্পানির মুনাফায় যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। শেয়ারহোল্ডাররা এই মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই উচ্চ খেলাপিতে নিমজ্জিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।