শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) শেয়ার বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এতে কপাল পুড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম (ইএসএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেয়ার বরাদ্দ দিতে গিয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৫ লাখ শেয়ার কম দিয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভাগের এই শেয়ার প্রবাসী (এনআরবি) এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের দেয়া হয়েছে। যার সিংহভাগ পেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

আগে আইপিও’র শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হতো ইস্যু ম্যানেজারদের তত্ত্বাবধানে লটারির মাধ্যমে। এতে আবেদন করা যে বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য ভালো তারা আইপিও’র শেয়ার পেতেন। সম্প্রতি আইপিও’র নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আইপিওতে আবেদন করা প্রত্যেক বিনিয়োগকারী শেয়ার পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে লটারির পরিবর্তে ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম (ইএসএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিএসই বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বরাদ্দ দিচ্ছে। আইপিও’র নতুন নিয়মে প্রথম কোম্পানি হিসেবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ দেয়া হয়। সোনালী লাইফের শেয়ার সঠিক নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ দেয়া হলেও নতুন নিয়মে দ্বিতীয় কোম্পানি বারাকাত পতেঙ্গা পাওয়ারের শেয়ার বরাদ্দ দিতে গিয়ে ভুল করে বসেছে ডিএসই।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দেয়া সম্মতিপত্র (কনসেন্ট লেটার) অনুযায়ী, বারাকা পতেঙ্গা কোম্পানি আইপিওতে মোট ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ৪৮৮টি শেয়ার ইস্যু করেছে। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের (ইআই) দেয়া হয় ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৮৮টি। বাকি ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ার বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে (ইআই ব্যতিত) নিয়ম অনুযায়ী ভাগ করে দেয়ার কথা। সেটাও বিএসইসি কনসেন্ট লেটারে ঠিক করে দিয়েছে।

বিএসইসির কনসেন্ট লেটার অনুযায়ী, আইপিওর ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ারের মধ্যে প্রবাসি বিনিয়োগকারীরা ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার শেয়ার দেয়া কথা। বাকি ২ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার ২০০টি শেয়ারের মধ্যে ২০ শতাংশ বা ৫৯ লাখ ১ হাজার ৬৪০টি শেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের দেয়ার কথা। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাওয়ার কথা ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৫৬০টি শেয়ার।

কিন্তু ডিএসই কর্তৃপক্ষ ভুলে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি শেয়ার কম দিয়েছে। বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪০৮টি এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের ৪৮টি শেয়ার বেশি দিয়েছে। ডিএসইর এমন ভুল করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫৮টির পরিবর্তে ৫৪টি করে শেয়ার পেয়েছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক সাধারণ বিনিয়োগকারী ৪টি করে শেয়ার কম পেয়েছেন। অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ২০টি করে শেয়ার বেশি পেয়েছেন। ফলে তারা ৭৭টির বদলে ৯৭টি করে শেয়ার পেয়েছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বারাকাত পতেঙ্গা পাওয়ারের আইপিও শেয়ার বরাদ্দের বিস্তারিত কোনো তথ্য আমরা এখনো পাইনি। যদি শেয়ার বরাদ্দের ক্ষেত্রে বড় ভুল হয় আমরা ক্ষতিয়ে দেখবো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারির সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘আইপিও’র শেয়ার বরাদ্দ দেয়ার কাজটি করে ম্যানেজমেন্ট। এটি টেকনিক্যাল বিষয়। বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের শেয়ার বরাদ্দের ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা আমার জানা নেই। আমি এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলবো।