শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) বন্ড ছেড়ে বিদেশি মুদ্রায় ১৫০ কোটি ডলার ঋণ নিতে চায়। বন্ডের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে আইসিবি ইতিপূর্বে নেওয়া উচ্চ সুদের ঋণ পরিশোধ করবে। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে রাষ্ট্রীয় এই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি। বিদেশি এই বন্ড ছাড়ার বিষয়ে গত মার্চে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে আইসিবি।

দশ বছর মেয়াদি এই বন্ডের কুপন রেট বার্ষিক ৩ শতাংশ। প্রথম দুই বছর গ্রেস পিরিয়ড। তৃতীয় বছর থেকে বার্ষিক ৮টি সমান কিস্তিতে এই ঋণের আসল টাকা পরিশোধ করবে আইসিবি। সুদ পরিশোধ করা হবে ষান্মাসিক ভিত্তিতে। গত বছর বিদেশি বন্ড ইস্যু করে ১০০ কোটি ডলার সংগ্রহের প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ১৫০ কোটি ডলার সংগ্রহের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ। এই বন্ড থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার উচ্চ সুদে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করবে আইসিবি। অবশিষ্ট অর্থের মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ ও পুঁজিবাজারে ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দেওয়া চিঠিতে আইসিবি জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তর থেকে স্বল্প সুদে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া আগে সংগৃহীত মেয়াদি আমানত পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল জোগানোর জন্য বিদেশ থেকে স্বল্প সুদে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় আইসিবিকে জানায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের বিষয়টি একটি নীতিগত বিষয়।

সুতরাং প্রস্তাবিত বন্ডের আইনগত ও আর্থিক দিক, সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং অন্যান্য যৌক্তিকতাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশেষজ্ঞর মতামত এবং অবশ্যই আইসিবির পর্ষদের সিদ্ধান্তসহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাতে বলা হয় আইসিবিকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী, বিদেশি বন্ড ছাড়ার বিষয়ে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতামত সংগ্রহ করতে শুরু করেছে বলে জানান আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিএসইসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকনির্দেশনা পেলে আমরা পূর্ণাঙ্গ একটি প্রস্তাব তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পাঠাব।’ এই তহবিল পেলে আইসিবির তারল্য প্রবাহ এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করেন আইসিবি এমডি।

আইসিবির ক্রেডিট ডিভিশন থেকে পাঠানো ওই প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে ছয়টি নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা ও আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বিএসইসিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পুঁজিবাজারে তারল্যের জোগান বাড়াতে আইসিবির আন্তর্জাতিক বাজারে ১৫০ কোটি ডলার মূল্যের বন্ড ইস্যুর প্রাথমিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

চিঠিতে আইসিবি জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে পুঁজিবাজারে অব্যাহত মন্দাভাব বিরাজ করায় বাজারের ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল আইসিবির আর্থিক সক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে। উচ্চ সুদে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত নিতে হয়েছে। তবে ২০১৭ সালের পর মেয়াদি আমানতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একক গ্রাহক ঋণসীমার কারণে আমানত সংগ্রহের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বল্পমেয়াদি আমানতের ওপর আইসিবির নির্ভরশীলতা কমাতে ২ হাজার কোটি টাকার সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যু করে। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল থেকে ৭৬০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আইসিবি।

আইসিবি বলছে, বর্তমানে তাদের তহবিল ব্যয় (কস্ট অফ ফান্ড) প্রায় ৯ শতাংশ এবং প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ১০ থেকে ১১ শতাংশ সুদে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো না হওয়ায় পুঁজি প্রত্যাহারের সুযোগ না পাওয়ায় ওই আমানত ফেরত দিতে পারছে না সংস্থাটি।

গত ২৪ মার্চ আইসিবির পর্ষদের ৫৯৩তম সভায় বিদেশি বন্ড ছাড়ার বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া এই বন্ডের আইনগত ও আর্থিক ঝুঁকি এবং অন্যান্য যৌক্তিকতা নিরূপণে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।