শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সহ সব মহলে উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা একের পর এক চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের গতিশীলতাকে স্থিতিশীল করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরকে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।

কারন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ততই বাড়ছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজার ঘিরে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ শঙ্কা দূর করা ও বাজারকে স্থিতীশীল রাখতে চারটি প্রণোদনামূলক সুখবর দিয়েছে সরকার।

সুত্রে মতে, সুখবর গুলো হলো: রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কর্তৃক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বন্ডের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি বিনিয়োগের চুড়ান্ত অনুমতি মিলেছে। প্রস্তাবিত বন্ডে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে সব বাধা দূর করে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আইসিবি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বন্ডে এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধ রয়েছে। এদিকে, পরিকল্পনা অনুসারে, আইসিবির ইস্যু করতে যাওয়া ২ হাজার কোটি টাকার বন্ডের মূল বিনিয়োগকারী হতে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান আবার আইসিবির করপোরেট উদ্যোক্তা-পরিচালকও। এতে বন্ডে তাদের বিনিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

অন্যদিকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির অর্থ ৬ মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ১০ শতাংশ ‘গেইন ট্যাক্স’ ছাড় পাবেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা। তবে এ টাকা ন্যূনতম তিন বছর বিনিয়োগে রাখতে হবে পুঁজিবাজারে। এমন বিধান রেখে এক সার্কুলার জারি করবে জাতীয় রাজস্ব র্বোড (এনবি আর)।

বিশ্বস্থ সুত্রমতে জানা যায়, শিগগরিই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবি আর) চেয়ারম্যান এসআরও স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসাইন ভুঁইয়া দেশের বাহিরে অবস্থান করায় এসআরও জারি হয়নি। এনবি আর’র চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান দেশে ফিরেছেন দুই এবদিনের মধ্যে অফিস করারও সম্ভাবনা রয়েছে।

আর এনবি আর এর পক্ষ থেকে এসআরও জারি হলেই ডিএসইর সদস্যদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসবে। পোশাক খাতের উৎসে কর কমানো এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নির্বাচনী বছরকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংক মালিকদের দাবির মুখে ব্যাংকগুলোর সিআরআর ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কারণ, বছরের শুরুতেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক তারল্য সংকট দেখা দেয়। আর এর প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারেও।

ফলে ব্যাংকিং সেক্টরের তারল্য সংকট কমাতে ১ শতাংশ সিআরআর কমানোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি ব্যাংকগুলো ৫০ শতাংশ আমানত রাখার আইন করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে পোশাক মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে করপোরেট করও আড়াই শতাংশ কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়। পুঁজিবাজারে তালিভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে সেটা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এরপর থেকে ব্যাংক ও পোশাক খাতের কোম্পানিরগুলোর শেয়ারের দাম ও লেনদেন দুটোয় বাড়ছে।

সর্বশেষ বাজারের তারল্য সংকট দূর করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে প্রথমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রির ওপর থাকা ১৫ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে ৫ শতাংশ ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যা দ্রæত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) করে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান দেশ প্রতিক্ষণ কে বলেন, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার আগেও উদ্যোগ নিয়েছ এখনো উদ্যোগ নিচ্ছে। বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সব সময় উদ্যোগ নেওয়াই কমিশনের দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে আইসিবিকে ২ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করি প্রতিষ্ঠানটি সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করে পুঁজিবাজারকে সার্পোট দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান  দেশ প্রতিক্ষণ কে বলেন, পুঁজিবাজারে আস্থা ও তারল্য সংকট রয়েছে। বাজারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগের মধ্যে শঙ্কা আরো বাড়ছে। তবে আস্থা ও তারল্য সংকটের বাজারে সরকারের উদ্যোগগুলো কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, এনবি আর এর পক্ষ থেকে এসআরও জারি হলে সেটার নম্বর আইন মন্ত্রনালয় হয়ে বিজি প্রেসে যাবে। আর বাকি কাজ সম্পন্ন করতে দুই দিন সময় লাগতে পারে। চীনা কনসোর্টিয়ামের সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার ১০ শতাংশ গেইন ট্যাক্স ছাড়ের সার্কুলার হয়ে গেলে তার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন এই টাকা থেকে যে পরিমানই বিনিয়োগ হবে সেটা তিন বছরের জন্য। তাই এই সময়টা কিন্তু কম নয়, এবং এটা পকৃত বিনিয়োগ।

এদিকে মূলধনি মুনাফায় কর ছাড়ের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ডিএসইর সদস্যরা। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রি করে পাওয়া টাকার ওপর প্রযোজ্য মূলধনি মুনাফায় ১০ শতাংশ কর ছাড় দেয়ায় আমাদের তারল্য সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে।

এ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কর ছাড়ের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবি আর) পক্ষ থেকে এসআরও জারি হলেই ডিএসইর সদস্যদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসবে। সুত্র:  দেশ প্রতিক্ষণ