central pharmaশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের আয়ের তথ্যে বড় ধরনের গরমিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোম্পানিটি ৬ মাসের আর্থিক রিপোর্টে কম আয় দেখালেও তিন মাস পর তা সংশোধন করে আয় বাড়িয়ে দেখিয়েছে। কিন্তু আয় বাড়ানো কিংবা কমানোর বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। এ অনিয়মের বিষয়ে কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কোম্পানিটির এ ধরনের আচরণ সিকিউরিটিজ আইনের লংঘন। কারণ কোম্পানির আয়ের ওপর ভিত্তি করে শেয়ারের দাম উঠানামা করে। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ব্যবস্থা নিতে হবে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনসুর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি তাদের ভুল হয়েছে। পরে স্টক এক্সচেঞ্জের পরামর্শে সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। এটি ছাপানোর কারণেও ভুল হতে পারে। তবে যে কারণেই ভুল হোক তাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি বলেন, সংশোধনীর ব্যাপারে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যাখ্যার চিঠি তারা এখনও পাননি।

ডিএসই সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি স্টক এক্সচেঞ্জে ৬ মাসের আর্থিক রিপোর্ট জমা দেয় সেন্ট্রাল ফার্মা। ওই রিপোর্টে দেখানো হয়, প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে আয় (ইপিএস) করেছে ৪৬ পয়সা। এ সময়ে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছিল ১৬ টাকা ৭৩ পয়সা।

কিন্তু তিন মাস পর গত মঙ্গলবার স্টক এক্সচেঞ্জে সংশোধিত আর্থিক বিবরণী জমা দেয় কোম্পানিটি। এতে শেয়ারপ্রতি আয় দেখানো হয় ৬১ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে, ১৬ টাকা ৮৮ পয়সা। এ হিসাবে আগের রিপোর্টের চেয়ে আয় বাড়িয়ে দেখিয়েছে ১৫ পয়সা।

তবে কেন আয় বাড়ল তার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি কোম্পানিটি। তবে একটি জায়গায় দেখিয়েছে, সংশোধিত রিপোর্টে ‘কস্ট অব গুডস সোল’ বাদ দেয়া হয়েছে। এর ফলে আয় বেড়েছে। আগের রিপোর্টে তা যোগ করে দেখানো হয়েছিল। তবে বিষয়টি মানতে রাজি নয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবারই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

এদিকে আয় বাড়িয়ে দেখানোর পর বাড়তে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম। বুধবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ছিল ১৯.৮০ পয়সার ছিল টাকা। বৃহস্পতিবার তা ১৯ টাকা ৫০ পয়সায় মধ্যে উঠানামা করছে। কিন্তু এর তিন মাস আগে ইপিএস কমিয়ে দেখানোর পর শেয়ারের দাম কমেছিল।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোম্পানির আয় হল শেয়ারবাজারের জন্য মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। এর সঙ্গে শেয়ারের দাম উঠানামা করে। তিনি বলেন, কোনো কোম্পানি আয়ের তথ্যে গরমিল করলে শেয়ারবাজারে তা বড় অপরাধ।

বিষয়টি তদন্ত করে বিএসইসিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এর সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লাভক্ষতি জড়িত। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বতর্মানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৪৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বতর্মানে সাতজন পরিচালকের মধ্যে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মোর্শেদা আহমেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনসুর আহমেদ। অন্য পরিচালকরা হলেন: মো. রোকনুজ্জামান, নাসিমা আক্তার, পারভেজ আহমেদ ভূঁইয়া, নাজমুল হক ভূঁইয়া এবং স্বতন্ত্র পরিচালক প্রফেসর সমীর কুমার শীল।