পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী খাতের কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড ঘোষিত লভ্যাংশে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা। ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করছে বলে খোদ বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন।

এছাড়া ঘোষিত লভ্যাংশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বিষয়টিকে রহস্যজনক মনে করছেন। এছাড়া এ সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কী-না তা খতিয়ে দেখারও আহ্বান জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

একাধিক বিনিয়োগকারী অভিযোগ করে বলেন, তিতাস গ্যাসের মত একটি ভালো মৌল ভিত্তি কোম্পানির কাছ থেকে বিনিয়োগকারীরা সব সময় ভালো ডিভিডেন্ড প্রত্যাশা করে। তবে তিতাস গ্যাস এবার ডিভিডেন্ড দিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় কোম্পানি তিতাস গ্যাস হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করলো ও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড নিয়ে কার্পণ্য করছে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী মাহামুদুল আলম বলেন, পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানিগুলো ঘোষিত ডিভিডেন্ড অনেক সময়ই বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে। এ কারণে কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করলেও কেবল ক্যাটাগরি ধরে রাখার জন্য ন্যুনতম পরিমাণ ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে। ফলে কোম্পানি যতো বেশি পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডই দিক না কেন তাতে বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছে না। তবে তিতাস গ্যাসের ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন।

এদিকে গত মঙ্গলবার বিকালে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২০১৫ সালের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আগের বছর কোম্পানিটি ৩৮ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে লভ্যাংশ কমেছে ৬১ শতাংশ। ২০০৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এ কোম্পানির লভ্যাংশে কখনোই আর এত উঠা-নামা হয়নি।
সর্বশেষ বছরে তিতাস গ্যাস শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) করেছে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা। এ হিসেবে কোম্পানি ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও তার রিজার্ভে হাত দেওয়া লাগত না।

গতকাল তিতাসের লভ্যাংশের খবর দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণে প্রকাশের পর অসংখ্য বিনিয়োগকারী ফোন করে এ নিয়ে তাদের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, বিশেষজ্ঞরা সব সময় কোম্পানির অতীত ইতিহাস, মুনাফা ও লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা দেখে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলে থাকেন। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো কোম্পানি যদি এমন অস্বাভাবিক আচরণ করে তাহলে তারা যাবেন কোথায়।

বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বিষয়টিকে রহস্যজনক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করছেন। তাদের বক্তব্য, তিতাস গ্যাস কোনো উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান নয় যে, আগামীতে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মুনাফার বড় অংশ রিজার্ভে রাখতে হবে। দেশে গ্যাসের মজুদ সীমিত বলে নেটওয়ার্ক বাড়ানোরও কোনো সুযোগ নেই এই কোম্পানির। ব্যবসা বহুমুখীকরণের কোনো আলোচনাও নেই। তাহলে বিনিয়োগকারীদেরকে বঞ্চিত করার এই হীন চেষ্টা কেন?

উল্লেখ, তিতাস গ্যাস লিমিটেড ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছর কোম্পানিটি ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০০৯ সালের জন্য লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল ২৭ শতাংশ। পরের বছর লভ্যাংশ বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়। ২০১১ সালের লভ্যাংশ ৫ শতাংশ কমে হয় ৩০ শতাংশ। ২০১২ সালের জন্য আবার ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। ২০১৩ সালেও একই হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালে লভ্যাংশ ৩ শতাংশ বেড়ে হয় ৩৮ শতাংশ। ২০১৫ সালের জন্য লভ্যাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। এটি আগের বছরের লভ্যাংশের অর্ধেকেরও কম। ৯৯০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি তিতাস গ্যাসের রিজার্ভের পরিমাণ ৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা

তিতাসের লভ্যাংশ সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেরিফ মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, একটি কোম্পানি কী লভ্যাংশ দেবে, না দেবে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। তবে এ ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা থাকা ভাল। যারা বিচার বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেন, তারা কোম্পানির অতীত রেকর্ড, তার ধারাবাহিকতা ইত্যাদি বিবেচনায় রাখেন। কোম্পানির লভ্যাংশ আগের ধারাবাহিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে বিনিয়োগকারীদেরকে বিপদে পড়তে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তিতাসের এমন লভ্যাংশ ঘোষণার সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক। কোম্পানিটি মোটেও দায়িত্বশীল আচরণ করেনি। লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উচিত ছিল।

তিনি বলেন, কোম্পানিটির অনেক টাকার এফডিআর রয়েছে। রিজার্ভে রয়েছে শত কোটি টাকা। কোম্পানিটির কোনো ধরণের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নেই। তারপরও রিজার্ভ থেকে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা কেউ বলছে না। এবার যে মুনাফা করেছে, তা থেকেই আগের বছরের চেয়ে বেশী হারে লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব ছিল।

মুস্তাফিজুর রহমান