স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার ইঙ্গিত মিললেও পুঁজিবাজার হাঁটছে উল্টো পথে। ফলে কিছুতেই থামছে না দরপতন, বরং ক্রমেই পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে। যেখানে সরকার সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে। সেখানে টানা দরপতনের কারণ কী। তাছাড়া শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে শেয়ার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পাঁচ ইসলামী ব্যাংক একীভূত ইস্যুতে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়েছে।

ফলে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা কিছুতেই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যার ফলে সেই পতনের ধারায় ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজার। ফিরছে না আস্থা। সব মিলিয়ে দিশেহারা বিনিয়োগকারীদের শনির দশা কাটছে না।

এদিকে চলতি অর্থবছরের শুরুতেই পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সূচক এবং টাকার অঙ্কে লেনদেন বৃদ্ধির নতুন রেকর্ডও সৃষ্টি হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা হঠাৎ করে পুঁজিবাজারের এহেন আচরণের পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের মতে, অর্থনীতির সব সূচক এ মুহূর্তে ভালোর দিকে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়েছে।

মূল্যস্ফীতি ক্রমেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় পুঁজিবাজারের টানা দরপতন রহস্যজনক বলে মনে করছেন তারা। এছাড়া গত কিছুদিন ধরে বাজারে ধারাবাহিক দরপতন লেগেই আছে। মাঝে মধ্যে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষীণ আভাস দিলেও, বাস্তবে সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে না। এই লাগাতার পতনের কারণে সূচক এবং লেনদেন উভয়ই প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এমতাবস্থায় বাজারের টানা দরপতনের নেপথ্যের গভীর কারণগুলো খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সাধারণত, জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো পর্যায়ক্রমে বোর্ড সভার মাধ্যমে লভ্যাংশ ঘোষণা শুরু করলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বর্তমানে অনেক কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করছে এবং আরও অনেকে কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় আছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা।

কিন্তু বাজারে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র! এই ধারাবাহিক দরপতনের ফলে একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে বাজারের প্রতি তাদের আস্থাও তলানিতে ঠেকছে।

এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ৯৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। একই সঙ্গে টাকার অঙ্কে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। এর মাধ্যমে টানা সাত কার্যদিবস দরপতন হয়েছে। ফলে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমাণে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১১৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৬৭ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৩ টির, দর কমেছে ৩২৮ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫ টির। ডিএসইতে ৪৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫০৪ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৫ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ৩০ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৮ টির এবং ১৭ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৪ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।