শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলছে হাহাকার, টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কাগজ হয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারের ক্রমাগত দরপতনের কারণ কি কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীরা বিপুল পরিমাণ বিক্রয়াদেশ দিয়ে বসিয়ে রাখলেও ক্রেতা নেই। শেয়ারদর ২ শতাংশ কমলেই ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে শেয়ারের চাহিদা তৈরি না হওয়ায় দর পরের দিনও আরো কমছেই।

টানা পড়তে থাকা বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন আশ্বাসের কথা নানাজনে বলে এলেও তেমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আস্থাহীনতার কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার না কিনে বাজার পর্যবেক্ষণে আছে।

এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাজার বিশ্লেষক, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী কেউই সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত উত্থানে যারা বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরার আশা করছিলেন, তারা হতাশ। দিতে দিনে বাড়ছে এই হতাশা।

তাছাড়া পুঁজিবাজারের চলমান মন্দাবস্থা দূরীকরণে গত ৮ মার্চ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) থেকে ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু সেই টাকা বিনিয়োগেও কার্যকরি কোন সুফল আসেনি। তবে কয়েক লাখ কোটি টাকার পুঁজিবাজারে ওই ১০০ কোটিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়া নিয়ে শুরুতেই সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা শঙ্কা ছিল।

মুলত পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় বিএসইসির নির্দেশে দেশের সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলে সিএমএসএফ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। যা তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করতেই এই অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে।

কিন্তু এই বিনিয়োগের পরেও পুঁজিবাজারে পতন কমেনি। বরং বিনিয়োগের ঘোষণায় পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ডিএসইএক্স মূল্যসূচকটি কমছে। এছাড়া লেনদেনের পরিমাণ এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে।

এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসের চেয়ে তৃতীয় কার্যদিবসে আরও বড় দরপতন হলো দেশের পুঁজিবাজারে। এদিন শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির চাপ এত বেশি ছিল যে, প্রায় অর্ধশতাধিক কোম্পানির ক্রেতাই খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, দিনের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত ব্যাংক, বিমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ লেনদেন হওয়া প্রায় ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

তারা নতুন করে বাজারে আবারও ধসের হতে পারে এ আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করছেন। তার প্রভাবে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ৬৪ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ১৫৪ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি উভয় বাজারে কমেছে লেনদেনও। এর ফলে রোববার সূচক বৃদ্ধির পর সোম ও মঙ্গলবার টানা দুদিন দরপতন হলো। তার আগে গত সপ্তাহ টানা চারদিন দরপতন হয়েছিল।

ডিএসইর তথ্য মতে, মঙ্গলবার বাজারটিতে ৩৭৮টি প্রতিষ্ঠানের মোট ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৩৭টি শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৮টির, কমেছে ২৩৭টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টি কোম্পানির শেয়ারের।

লেনদেন হওয়া প্রায় সব শেয়ারের দাম কমায় এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে কমেছে ১১ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক কমেছে ২০ দশমিক ২৬ পয়েন্ট।

এদিন ডিএসইতে ৫৩২ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৪৩ কোটি ৫৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকার শেয়ার। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে।

ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেনের শীর্ষে ছিল আইপিডিসির শেয়ার। এরপর ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, লাফার্জহোলসিম, জেনেক্স ইনফোসেস, বিডি ল্যাম্পস, স্কয়ার ফার্মা, সোনালী পেপার, লঙ্কা বাংলা ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ এবং ওরিয়ন ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে ১৯ হাজার ৩৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সিএসইতে ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ২১৩টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির দাম। এ বাজারে ১০ কোটি ৬২ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৪ কোটি ৯১ লাখ ২৮ হাজার ৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, ঈদের খরচ যোগাড় করার জন্য বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। এটার কারণে এই দরপতন হতে পারে। তাছাড়া এখন পুঁজিবাজারে দরপতন হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। দেশের অর্থনীতি খুব ভালো অবস্থা রয়েছে।

তবে যেভাবে বিক্রির চাপ ছিল সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম কার্যকর না থাকলে আজ আরও অনেক বড় দরপতন হতো। সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়মের কারণে এখন একদিনে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম দুই শতাংশের বেশি কমতে পারছে না। এতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৬৪ পয়েন্ট পড়ে গেছে। যদি সার্কিট ব্রেকারের স্বাভাবিক নিয়ম কার্যকর থাকতো তাহলে সূচক দুইশ’পয়েন্ট পড়ে গেলেও অবাক হতাম না।

তিনি বলেন, ঈদের খরচ যোগাড় করার জন্য কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করছেন এটা সত্য। তবে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী আতঙ্কে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। আবার বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আতঙ্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। ফলে পতনের মাত্রা বেড়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা উঠে গেছে। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবে দরপতন হতে থাকে বাজারে বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখা কঠিন হবে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেহ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত দ্রুত স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা।