শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করেছে । আইপিওর অর্থ টি-বন্ডে বিনিয়োগ করার কথা থাকলেও তা কোম্পানি এফডিআর করেছে। একইসঙ্গে বেশ কিছু অর্থ অনুমতি ছাড়াই কোম্পানি আইপিও খাতে ব্যয় করেছে। ফলে আইপিওর অর্থ ব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

একইসঙ্গে কোম্পানির কাছে আইপিওর অর্থ ব্যবহার সংক্রান্ত নথি চাওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, আইপিও অর্থ ব্যবহারের বিষয়ে কোম্পানি গত বছর ২৯ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে দেখা যায়, কোম্পানি এফডিআরে বিনিয়োগের জন্য আইপিওর অর্থ ব্যবহার করেছে। তবে কোনো টি-বন্ডে বিনিয়োগ নেই, যা প্রসপেক্টাস অনুযায়ী হওয়া উচিত ছিল। এছাড়াও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে এবং আইপিওর খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ী ৩১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৪২ টাকা এফডিআর এবং টি-বন্ডে বিনিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাসহ কমিশনকে সাধারণ সভার মিটিংয়ের রেজুলিউশন না দিয়ে আইপিও খরচে ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি পাবলিক শেয়ারহোল্ডাররা অনুমোদন করেছেন, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২সিসি এর অধীনে জারি করা সম্মতিপত্রের অংশের শর্ত নং ৬ এর লঙ্ঘন।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই চিঠি জারির সাত কার্যদিবসের মধ্যে উল্লেখিত নথিসহ কোম্পানির অবস্থান স্পষ্ট করতে বলা হলো। একইসঙ্গে এফডিআর ফর্মের অনুলিপি, ব্যাংকগুলো থেকে নিশ্চিতকরণপত্র, এখন পর্যন্ত সেই এফডিআরের বিপরীতে কোনো লিয়েন রাখা হয়েছে কি না, ২০২২ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ভিডিবিএলের ডিপি এ৬ রিপোর্ট সহ সর্বশেষ পোর্টফোলিও প্রতিবেদন, পে অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফ্ট/চেক ক্যাশ ভাউচার আইপিও খরচ সংক্রান্ত তথ্য, ২০২১ সালের ২৬ জুনে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আইপিওর ব্যাংক প্রতিবেদন এবং উল্লেখ্য বিষয়ে সাধারণ সভার মিটিং রেজুলেশনের অনুলিপি জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত বছরের ২৯ মার্চ আইপিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর দেশের শেয়ারবাজারে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটি প্রতিটি ১০ টাকা দরে ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১৬ কেটি টাকা উত্তোলন করে। এই অর্থ সংগ্রহ করে কোম্পানিটি সরকারি ট্রেজারি বন্ড ও ফিক্সড ডিপোজিট, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে বলে জানিয়েছিল।

দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২১ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৬০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪.৭২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৫.২৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সোমবার (১৪ মার্চ) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৫.২০ টাকায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স তাদের আইপিওর অর্থ শুধু এফডিআরে বিনিয়োগ করেছে। তাদের টি-বন্ডেও অর্থ বিনিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তাই কোম্পানির আইপিওর অর্থ ব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।