শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। এরই সুবাধে বিনিয়োগের পালে লেগেছে হাওয়া। কেননা মাঝে মধ্যে দু-একদিন সংশোধন হলেও পরের দিন ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। লক্ষ্য যেন স্থিতিশীলতার সঠিক পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়া। এরই জের ধরে মূল্যসূচকের সঙ্গে বাড়ছে বাজার মূলধন। আসছে বিদেশী বিনিয়োগ। দেশী বড় বিনিয়োগকারীরাও আস্থাশীল হচ্ছেন বাজারের প্রতি। আর সরকারের নিজস্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি দিনের পর দিন বাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের বিনিয়োগ।

তেমনি পুঁজিবাজারে রাজনীতিতে সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমঝোতার প্রভাব পড়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের ‘কড়া’ অবস্থান থেকে সরে এসে সংলাপ আয়োজনে স্বস্তিতে ফিরেছে পুঁজিবাজার। নির্বাচনকে ঘিরে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা দিলেও গত মঙ্গলবার থেকে পুঁজিবাজারের চিত্র ছিল ঠিক উল্টো। শেয়ার কেনার চাপে সূচক ও লেনদেন উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরোধী দলগুলোর কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করলে পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়ায়। নির্বাচনকে ঘিরে সরকার কড়া অবস্থানে থাকবে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। যার জন্য বাজার পর্যবেক্ষণে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে। এতে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।

তবে রাজনৈতিক সংলাপ আয়োজনের ঘোষণায় অনেকটাই স্বস্তিতে ফিরেছে বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রির অর্থে মূলধনী মুনাফায় ১০ শতাংশ কর ছাড়ের অনুমোদনও পেয়েছে ব্রোকার্সরা। এতে নতুন করে এক হাজার কোটি টাকার মূলধন যোগান আসবে পুঁজিবাজারে।

এছাড়া পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীলতার স্বার্থে চারটি প্রণোদনামূলক সুখবর দিয়েছে সরকার। সুখবর গুলো হলো: রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কর্তৃক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বন্ডের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি বিনিয়োগের চুড়ান্ত অনুমতি মিলেছে। প্রস্তাবিত বন্ডে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে সব বাধা দূর করে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আইসিবি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বন্ডে এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধ রয়েছে। এদিকে, পরিকল্পনা অনুসারে, আইসিবির ইস্যু করতে যাওয়া ২ হাজার কোটি টাকার বন্ডের মূল বিনিয়োগকারী হতে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান আবার আইসিবির করপোরেট উদ্যোক্তা-পরিচালকও। এতে বন্ডে তাদের বিনিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নির্বাচনী বছরকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংক মালিকদের দাবির মুখে ব্যাংকগুলোর সিআরআর ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কারণ, বছরের শুরুতেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক তারল্য সংকট দেখা দেয়। আর এর প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারেও।

ফলে ব্যাংকিং সেক্টরের তারল্য সংকট কমাতে ১ শতাংশ সিআরআর কমানোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি ব্যাংকগুলো ৫০ শতাংশ আমানত রাখার আইন করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে পোশাক মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে করপোরেট করও আড়াই শতাংশ কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়। পুঁজিবাজারে তালিভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে সেটা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এরপর থেকে ব্যাংক ও পোশাক খাতের কোম্পানিরগুলোর শেয়ারের দাম ও লেনদেন দুটোয় বাড়ছে।

সর্বশেষ বাজারের তারল্য সংকট দূর করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে প্রথমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রির ওপর থাকা ১৫ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে ৫ শতাংশ ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে সংলাপ আয়োজনের সুবাতাস পুঁজিবাজারেও বইতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে সংলাপ আয়োজনে সেই ভীতি ও আতঙ্ক কেটেছে। অনেক বিনিয়োগকারী সক্রিয় হয়েছে।’

মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, ‘চীনা কৌশলগত অংশীদারের কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রির অর্থে কর ছাড়ের সরকারি সিদ্ধান্ত পেয়েছি। নতুন করে আরো এক হাজার কোটি টাকার মূলধন বাজারে আসছে। কাজেই পুঁজিবাজারে রাজনীতির মতোই সুবাতাস বইছে।’

বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, একদিকে চীনা ফান্ডের অর্থ বাজারে আসছে। অন্যদিকে আইসিবি’র মাধ্যমে আরও দুই হাজার কোটি টাকা বাজারে আসছে। সব মিলিয়ে বাজারে চাঙ্গাভাব ফিরে আসার সব উপাদান বিরাজ করছে। সুতরাং বাজার এখন সামনে যাবারই কথা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরোধী দলগুলোর কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করলে পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়ায়। নির্বাচনকে ঘিরে সরকার কড়া অবস্থানে থাকবে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। যার জন্য বাজার পর্যবেক্ষণে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে। এতে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। তবে রাজনৈতিক সংলাপ আয়োজনের ঘোষণায় অনেকটাই স্বস্তিতে ফিরেছে বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রির অর্থে মূলধনী মুনাফায় ১০ শতাংশ কর ছাড়ের অনুমোদনও পেয়েছে ব্রোকার্সরা। এতে নতুন করে এক হাজার কোটি টাকার মূলধন যোগান আসবে পুঁজিবাজারে।