স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ যোগ দেওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। ফলে টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে ৯৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। যার ফলে যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মূল্যসূচক ৫ হাজারের নিচে নেমে গেছে।

তারপরেও এই অযোগ্য রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে অপসারন করছে না সরকার। এছাড়া নিজেও পদত্যাগ না করে নির্লজ্জভাবে চেয়ার আঁকড়ে ধরে রেখেছে রাশেদ মাকসুদ কমিশন। যাতে প্রতিনিয়ত ধংস হতে হতে অতল গহ্বরের দিকে ধাবিত হচ্ছে পুঁজিবাজার।

তবে রাশেদ মাকসুদ কমিশনের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই বললেই চলে। ফলে বর্তমান কমিশনের পদত্যাগের মাধ্যমে যে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, তা কয়েক দফায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার অপসারন হচ্ছে বলে পুঁজিবাজারে কয়েকবার গুজব উঠে। যার উপর ভিত্তি করে প্রতিবারই বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে উঠেছিল এবং পুঁজিবাজার ইতিবাচক হয়েছিল। কিন্তু তার অপসারন বাস্তবে রুপ না পাওয়ায়, পুঁজিবাজার আবারও পতনের ধারায় ফিরে গেছে।

মুলত ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু পুঁজিবাজার। গত ১৫ মাসে পুঁজিবাজারের বৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো প্রতিদিনই কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। ফলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার ইঙ্গিত মিললেও পুঁজিবাজার চলছে সেই পুরানো উল্টো পথে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫ মাস পুঁজিবাজারের কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।

মুলত বর্তমান পুঁজিবাজার ৯৬ ও ২০১০ সালের দরপতনকে হার মানিয়েছে। টানা দরপতনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্তবর্তী সরকারের গত ১৫ মাসে যে ভাবে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছে তা ২০১০ সালের ধসকে হার মানিয়েছে। ফলে দিন দিন পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বর্তমান পুঁজিবাজারের যে অবস্থা চলছে তাতে ৯৬ ও ২০১০ সালের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ করছেন একাধিক বিনিয়োগকারীরা।

ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বারবার আস্থার সংকট, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোন অবদান রাখতে পারছে না পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা মনে করে বিএসইসির অদক্ষ্য ও অযোগ্য কমিশনের কারণে বেহাল দশা দেশের পুঁজিবাজারের।

এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল না করে বাজার সংস্কারের নামে অস্থিতিশীল করছেন। ফলে ক্রমান্বয়ে পুঁজিবাজার ডুবতে বসেছে। স্পর্শকাতর এই খাতটির সঙ্গে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের সরাসরি বিনিয়োগ জড়িত, প্রতিদিনের লেনেদেনের প্রতিফলন ঘটে সূচক উঠা-নামার মাধ্যমে, ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়াটিও সূচকের সমান্তরাল রেখায় প্রতিফলিত হয়। সূচক ও লেনদেন তলানিতে নামছে, যেন দেখার কেউ নেই।

অবশ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের খামখেয়ালীপনা, বাজার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব, নানা হঠকারী সিদ্বান্ত, ব্যক্তিগত অভিপ্রয়াস, পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে অবমূল্যায়ন, কমিশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানাবিধ কারণে দেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে ধ্বংসের দারপ্রান্তে।

ফলে গত বছরের ১৮ আগস্ট পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক কমেছে ১০৭৮ পয়েন্ট। মুলত রাশেদ মাকসুদ কমিশন যখন দায়িত্ব নেয় তখন ডিএসই সূচক ছিলো ৫৭৭৮.৬৩ পয়েন্ট।

তবে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৪৯০৬.২৯ পয়েন্ট। তবে নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখ ১২২ পয়েন্ট সূচকের বড় দরপতনে ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়িয়ে ছিলো ৪৭০২ পয়েন্ট। আর দৈনিক লেনদেনের ধীর গতিতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া কমিশন সংক্রান্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে আস্থার সংকট।