titas gasশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকাধ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। এ কোম্পানির শেয়ারের দর দীর্ঘদিন ধরে বাড়ছে না। তাছাড়া চাঙ্গাবাজারে তিতাস গ্যাসের শেয়ারে কোন প্রভাব নেই। ফলে এ  কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা দু:চিন্তায় রয়েছেন। তাছাড়া কোম্পানিটির ব্যবসার পরিধি বাড়লেও মুনাফা না বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

সম্প্রতি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চেয়ারম্যান জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, বেশি মুনাফা পেতে চাইলে বাসাবাড়ির গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে তা শিল্প খাতের জন্য সরবরাহ করা উচিত। এতে মুনাফা বেশি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, পেট্রোবাংলার তথ্য মতে এখন বাসাবাড়িতে মোট গ্যাসের ২০ শতাংশ ব্যবহার হয়; যা বিক্রি করে আসে ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। এটা যদি পাওয়ার সেক্টরে সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তবে এই গ্যাস বিক্রি করে আসবে ৮০ হাজার কোটি টাকা। তাই বেশি মুনাফা চাইলে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।”

নাজিমউদ্দীন চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরের নিচ দিয়ে যেভাবে গ্যাসের লাইন গেছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর খুব কম দেশেই ন্যাচারাল গ্যাস ব্যবহারে রান্না করা হয়। এখান থেকে বেরিয়ে আসছে সবাই। তিনি বলেন, গ্যাসের মার্জিন পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য আমরা জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিইআরসির কাছে আবেদন করেছি। আমরা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করছি।

তবে গত পাঁচ বছরে কোম্পানির গ্যাস বিক্রি প্রায় ৫৯ শতাংশ বাড়লেও এ সময়ের ব্যবধানে মুনাফা উল্টো ১৮ শতাংশ কমেছে। এ জন্য মূলত সরকার কর্তৃক বিতরণ চার্জ কমিয়ে দেয়াকে দায়ী করছে কোম্পানিটি। যদিও এর পেছনে কোম্পানির পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি ও সুদ আয় কমে যাওয়াকেও দায়ী করছেন অনেকে।

তিতাসের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি, সার কারখানা, শিল্প, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি ও আবাসিক-অনাবাসিকসহ সব খাতে গত পাঁচ বছরে তিতাসের গ্যাস বিতরণ ও রেভিনিউ বেড়েছে।

২০১১-১২ হিসাব বছরে মোট রেভিনিউ ছিল ৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে তা ১১ হাজার ৩১৭ কোটিতে উন্নীত হয়। এর আগে তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১২-১৩ হিসাব বছরে ৭ হাজার ৪৬২ কোটি, ২০১৩-১৪ হিসাব বছরে ৭ হাজার ৭৭৩ কোটি ও ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা হয়। পাঁচ বছরে কোম্পনিটির রেভিনিউ ধারাবাহিক ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও নানা কারণে মুনাফা উল্টো কমে গেছে।

২০১১-১২ হিসাব বছরে তিতাসের কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৮৯০ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ৭২৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় নেমে গেছে। মূলত কোম্পানির পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি, সুদ বাবদ আয় কমে যাওয়া ও সরকার কর্তৃক গ্যাস বিতরণ চার্জের ফি কমিয়ে দেয়ায় মুনাফার ওপর এ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কোম্পানিটির।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, তিতাসের আয়ের ৬০ শতাংশ আসে বিতরণ চার্জ থেকে। ২০১৫ সালের আগস্টে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য ও তিতাস গ্যাসের বিতরণ চার্জ পুনর্র্নিধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। একই সঙ্গে তিতাসকে বিতরণ চার্জ বাবদ প্রাপ্ত আয় আলাদা হিসাবে নেয়ার নির্দেশনা দেয় বিইআরসি। বিতরণ চার্জ থেকে প্রাপ্ত আয় কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাবে না নেয়ার নির্দেশ দেয় দেশের জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

ফলে কোম্পানির রাজস্বের প্রধান উত্সই আলাদা হিসাবে চলে যায়, যার প্রভাব পড়ে নিট মুনাফায়। সর্বশেষ হিসাব বছরেও এই খাতে বড় ধরনের মুনাফা হারায় কোম্পানিটি।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় তিতাসের পরিচালন ব্যয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে সুদ আয় কমেছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর ওপর যোগ হয় বিতরণ চার্জ কমার প্রভাব।

উল্লেখ্য, আগের হিসাবে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রিতে তিতাস গ্যাসের আয় হতো ৯৭ পয়সা। এর মধ্যে ৫৫ পয়সা আসত বিতরণ চার্জ থেকে। আর গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ, সুদ ও বিবিধ আয় থেকে আসত বাকি ৪২ পয়সা। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা আদেশে বিতরণ চার্জ ৫৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ২৯ পয়সায় নামিয়ে দেয় বিইআরসি।

কমানোর যুক্তি হিসেবে তারা জানায়, তিতাস গ্যাসের বিতরণ রাজস্ব চাহিদা মেটাতে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ২৯ পয়সা প্রয়োজন হয়। আর বিদ্যমান অন্যান্য আয় (গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ, সুদ ও বিবিধ আয়) বাবদ ৪২ পয়সা প্রাপ্তি বিবেচনায় তিতাস গ্যাস কোম্পানির বিতরণ চার্জ বাবদ আর কোনো আয়ের প্রয়োজনই হয় না।

তবে বিষয়টি ভিন্ন মত দিয়ে চার্জ পুনর্র্নিধারণে বিইআরসির কাছে একটি আবেদনপত্র দিয়েছে তিতাস। পরবর্তীতে এক বছরের বেশি সময়ে এ বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকে উদ্যোগ দেখা গেলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও মুনাফা কমার ধারাবাহিকতায় ছিল তিতাস। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১ টাকা ৮ পয়সা ইপিএস দেখিয়েছে কোম্পানিটি, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৫৭ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৬৩ টাকা ৭৩ পয়সা।

২০০৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় তিতাস গ্যাস। বর্তমানে এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৯৮৯ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা। রিজার্ভে আছে ৫ হাজার ২০০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

মোট শেয়ার সংখ্যা ৯৮ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৮৩১টি; বর্তমানে যার ৭৫ শতাংশ রয়েছে সরকারের হাতে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৩ দশমিক ৬৩, বিদেশী ১ দশমিক ৭৪ এবং বাকি ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বশেষ ৪৮ টাকা ৩০ পয়সায় তিতাস গ্যাসের শেয়ার হাতবদল হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর ছিল ৫২ টাকা ৯০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ৪১ টাকা ২০ পয়সা।