asugonj powerফাতিমা জাহান, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ইস্যূতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে উত্তোলন করবে না সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)। কোম্পানিটি আইপিও মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করবেনা। এর পরিবর্তে আপাতত বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোট ১ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হবে। চলতি বছরই ৬০০ কোটি টাকার এবং বাকি ৪০০ কোটি টাকার বন্ড ২০১৭ সালে ইস্যু করা হবে। গতকাল বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষ একটি সূত্রে এমন তথ্য জানিয়েছে।

জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে গত রোববার সরকারি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার অফলোড-সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সে বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি এপিএসসিএলের বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব করা হয়।

সভায় বিদ্যুৎ জ্বালানি, শিল্প, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক স্বপন কুমার বালার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ারবাজারে সরকারি কোম্পানির শেয়ার অফলোডের ব্যাপারে বিভিন্ন কোম্পানির মতামত ও সংশ্লিøষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ জমা দেয়ার জন্য গত ৩০ জুন পর্যন্তÍ সময় ধার্য ছিল। তবে বিদ্যুত্ বিভাগ ছাড়া কেউই এ বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ উপস্থাপন করতে পারেনি।

সূত্র বলছে, নানা জটিলতার পাশাপাশি শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে জোর উদ্যোগ নেয়ার প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ার অফলোডে ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে মতামত দেয়ার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বে আসার পর শেয়ারবাজারে সরকারি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার অফলোডের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য সে সময় প্রথমে ২৪টি সরকারি কোম্পানির তালিকা তৈরি হয়। পরবর্তিতে এ সংখ্যা ৩২-এ উন্নীত করা হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট সরকারি কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগে বাধ্য করার হুমকিও দেন। তবে কোম্পানিগুলো শেয়ার অফলোড করতে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে কিছুটা তৎপরতা দেখিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত গত রোববারের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এপিএসসিএলের ১ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি বছরই ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হবে। আগামী বছর অবশিষ্ট ৪০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হবে। বন্ডটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হবে।

গত বছর দেশের বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প, বিশেষ করে বিদ্যুত্ খাতের উন্নয়নে দেশী-বিদেশী শেয়ারবাজার থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করে জ্বালানি ও বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়। সে সময় দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শেয়ার ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বিদ্যুত্ খাতে নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তÍবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় আগামী ১০ বছরে ৬ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি বৃহত্ বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন এবং ১৩টি সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

এপিএসসিএল দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি। কোম্পানিটি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে পরিচালিত হয়। ২০০০ সালের ২৮ জুন এপিএসসিএল কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী নিবন্ধিত হয়। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৬ শতাংশ জোগান দেয় তারা। নয়টি ইউনিটে মোট ১ হাজার ১২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিটি বর্তমানে ৯৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

এদিকে সরকারের আরেক জ্বালানি কোম্পানি লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গণ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল) তাদের মতামতে জানিয়েছে, পরিচালন লোকসানের কারণে তারা আপাতত শেয়ার অফলোড করতে পারছে না। গত আট বছর নানা জটিলতার মধ্যে শেয়ার অফলোডের প্রক্রিয়া শুরু করলেও এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কোম্পানির পরিচালন লোকসান। এর আগে গত ৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অবিলম্বে এলপিজিএলের ২৫ শতাংশ শেয়ার আফলোড করার নির্দেশ দেয়া হয়।

২০১২ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সরাসরি তালিকাভুক্তির অনুমোদন পাওয়ার পরও নানা জটিলতায় রাষ্ট্রায়ত্ত আরেক কোম্পানি অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি হতে পারেনি। লাভজনক হলেও কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সমন্বয়হীনতা, ধীরগতি, সম্পদ পুনর্মূল্যায়নে কালক্ষেপণ, নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব, স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি তালিকাভুক্তির অনুমোদনের পর নতুন করে মূলধন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগসের শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

একই পরিস্থিতি সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক অস্বাভাবিক প্রিমিয়াম দাবি করে শেয়ার ছাড়ার আবেদন জানিয়েও পরবর্তীতে পিছিয়ে যায়। এসব কারণেই সরকারের নীতিনির্ধারকরা বারবার ঘোষণা দিলেও প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই নির্ধারিত সময়ে শেয়ার ছাড়তে ব্যর্থ হয়েছে।