all bank lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দুর্দিন চলছে ব্যাংকিং খাতে। ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীদের দুর্দিন কাটছে না। দিন যতই যাচ্ছে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দর ততই কমছে। এক সময় বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্যাংক খাতের শেয়ারের আদর থাকলেও এখন আর নেই। বছর ছয় আগেও ছিল রমরমা; বিনিয়োগকারীদের আস্থা ছিল, সুনাম ছিল ‘ভালো মৌল ভিত্তি’ শেয়ার হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু আর এখন এ খাতে টাকা খাটানো অনেকেরই পথে বসার দশা।

২০১০ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার যখন ফুলে ফেঁপে চূড়ায় উঠেছে, এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার তখন ১০০ টাকা দর নিয়ে উড়ছিল। অথচ গত প্রায় একবছর ধরে অভিহিত মূল্যের (১০ টাকা) নিচে ঘোরাফেরা করছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই বেসরকারি ব্যাংকের শেয়ারের দাম। সোমবার লেনদেন হয়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সায়। চাঙ্গা সময়ে যারা এই শেয়ারে টাকা ঢেলেছেন, তাদের অবস্থা এখন কেমন- তা অনুমান করা কঠিন নয়।

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারের অবস্থা আরও করুণ। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এই শেয়ার লেনদেন হচ্ছে পাঁচ টাকারও নিচে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ৮টির এ দশা। ‘ফেইস ভ্যালু’ও ধরে রাখতে পারেনি এসব কোম্পানির শেয়ার। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, যেসব বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা-মালিকরা নানাভাবে ক্ষমতাকেন্দ্রের কাছাকছি রয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের কৃপা দৃষ্টি পেয়ে আসছেন, তাদের শেয়ারই সবচেয়ে বেশি দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে ৩০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে সোমবারের লেনদেন শেষে ৮টি ব্যাংকের শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের কাছে অবস্থান করছে। অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে- এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার।

সোমবারের লেনদেন শেষে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার দর অবস্থান করছে ৭.৯ টাকায়। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৭.৯ টাকায়, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৪.১ টাকায়, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৯.৬ টাকায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৯.২ টাকায়, এনসিসি ব্যাংকের ৮.৩ টাকায়, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৭.৮ টাকায় ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার দর ৭.৯ টাকায় অবস্থান করছে। এদিকে অভিহিত মূল্যের কাছে অবস্থান করছে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর। এ ব্যাংকটির শেয়ার দর রয়েছে ১৩ টাকায়।

এছাড়া যমুনা ব্যাংকের ১২ টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ১২.২ টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১১.৯ টাকা ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ১১.৬ টাকায় অবস্থান করছে। শেয়ার দর ১৩ টাকার মধ্যে অবস্থান করা ব্যাংকগুলোর শেয়ারকে এক্ষেত্রে হিসাবে নেওয়া হয়েছে। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। সোমবার দিনশেষে ব্যাংকটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়িয়েছে ১০২ টাকায়।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে একসময় আলোচিত ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল)। ২০১০ সালে এই ব্যাংক ৯৫ শতাংশ এবং ২০১১ সালের খারাপ বাজারেও ৬৫ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল।

কিন্তু ২০১২ সালে কম লাভের কথা বলে মাত্র ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় শেয়ারহোল্ডারদের। গত দুই বছর ধরে ১০ শতাংশ হারে শেয়ার লভ্যাংশ দেয় ব্যাংকটি। এর ফলে শেয়ারদরও হারাতে থাকে হু হু করে। গত এক বছরে এই শেয়ারটি ৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১২ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় ভাবমূর্তি ও আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আর টাকা খাটানোর সাহস পাচ্ছেন না। ফলে ব্যাংকের শেয়ারের এক করুনি দশা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সালেহ জহুর বলেন, ‘ব্যাংকের যে শেয়ারগুলো অভিহিত মূল্যের নিচে নেমেছে সেগুলোরও এত খারাপ হওয়ার কথা নয়। কারণ এই ব্যাংকগুলোর নেট অ্যাসেট ভেল্যু ভালো।

এর পরও ব্যাংকের শেয়ারের এই অবস্থার মূল কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। অর্থবছরে প্রায় সব ব্যাংকই কমবেশি লাভ দেখিয়েছে। কিন্তু চারটি ব্যাংক ছাড়া অন্য যারা লাভ দেখিয়েছে এর বিপরীতে প্রভিশন অনেক বেশি। ব্যাংকগুলোর অনাদায়ী ঋণের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে।’

সালেহ জহুর আরো বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর কাছে অলস টাকা পড়ে আছে। এই মুহূর্তে টাকার চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি। কিন্তু বেসরকারি খাতে তেমন বিনিয়োগ নেই। মানুষের হাতে টাকা আছে, কিন্তু বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছে না।’