bataশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বহুজাতিক কোম্পানির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের এখন আর বহুজাতিক কোম্পানির প্রতি আগ্রহ নেই। গত সপ্তাহজুড়ে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে বহুজাতিক কোম্পানির। সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতায় দরপতনে এগিয়ে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বিক্রয়চাপে রয়েছে গত কয়েক বছর রিটার্নে এগিয়ে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান।

বাজারে এ দরপতনের পেছনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপকে দায়ী করছেন মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেট বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে। কারণ বিদেশি কিছু ফান্ডকে তরলীকরণ করতে হচ্ছে। এতে তাদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

জানা গেছে, বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরেই বিদেশীরা এসব কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে।

গত এক-দেড় মাসে গড়ে ১০-১৫ শতাংশ হারে দর হারালেও কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর ২০ শতাংশের বেশি কমেছে। যদিও বিক্রি, কর-পরবর্তী মুনাফা ও মুনাফা মার্জিনে এগিয়েছে বেশির ভাগ কোম্পানি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শেয়ারদরে দীর্ঘমেয়াদি উত্থানের পর অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যেই এসব শেয়ারে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তাদের একটি বড় অংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী। দেশের পুঁজিবাজারে বিভিন্ন খাতে ১২টি বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।

কোম্পানিগুলো হলো— ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, বাটা সু, সিঙ্গার, লিন্ডে, লাফার্জ সুরমা, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন, গ্রামীণফোন, বার্জার পেইন্টস, রেকিট বেনকিজার, আরএকে সিরামিকস ও ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড।

২০১০ সালের ধসের পর মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাত ধরেই বাজারে দেশী-বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছরে এর কয়েকটির শেয়ারদর তিন-চার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, এ সময়ে সব বহুজাতিক কোম্পানিই বিক্রি, নিট মুনাফা ও মুনাফার মার্জিনে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি কোম্পানি তাদের ব্যবসায়ে সাময়িক কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। তবে বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ও অন্যান্য সম্ভাবনার ভিত্তিতে বলা যায়, তা কাটিয়ে ওঠার মতো অবস্থাতেই রয়েছে তারা।

বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতায় গত বছর অনেক বিদেশী তহবিল উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে কিছু মুনাফা তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম ছিল না। উন্নত বিশ্বের তহবিলগুলো সাধারণত বিনিয়োগে কোম্পানির ব্যবসায়ে প্রবৃদ্ধি ও নিয়মিত উচ্চহারে লভ্যাংশকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।

এ হিসেবে স্থানীয় কিছু কোম্পানির পাশাপাশি তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকেই প্রাধান্য দেয়। এর বাইরে কিছু বিদেশী তহবিল অবসায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এর অংশ হিসেবে তাদের মুনাফা তুলে নিতে হয়েছে।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই দেশের শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতার শুরু। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আড়াই-তিন  মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৩০ পয়েন্টের বেশি কমেছে। জানুয়ারির শুরুতে সূচকটি ছিল ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্টের ঘরে, বৃহস্পতিবার ৪ হাজার ৩৭০-এ নেমে আসে।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত এক-দেড় মাসে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার। ১৮৮ থেকে ১৪৭ টাকায় নেমে এসেছে প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির শেয়ারদর, শতকরা হিসাবে ২৪ ভাগের বেশি। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৫ হিসাব বছরের জন্য কোম্পানিটি গত দেড় দশকের মধ্যে সবেচেয়ে কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে এর নিট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে।

প্রায় একই সময়ের ব্যবধানে দর ৩ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় নেমে এসেছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ারদর। চার-পাঁচ সপ্তাহের ব্যবধানে ২১ শতাংশ দর হারিয়েছে কোম্পানিটি। ২০১৫ সালে বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখলেও কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশের মতো কমে গেছে।

এদিকে বার্জার পেইন্টসের মুনাফা গত বছর ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকেই সংশোধন-পর্বে আছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। বাটা সু কোম্পানি ২০১৪ সালে ৭০ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল। ২০১৫ সালের প্রথম নয় মাসেই তাদের নিট মুনাফা ৫৮ কোটি টাকা ছাড়ায়।

চামড়া খাতের এ কোম্পানির শেয়ারদর ছয় মাস ধরেই নিম্নমুখী। তবে গত দেড় মাসে দর বেশি কমেছে। এ সময়ে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ১৭০ টাকায় নেমে এসেছে শেয়ারটির দর। শেয়ারের দর কিছুটা কমেছে লিন্ডে বিডির। আগের বছরের তুলনায় জ্বালানি খাতের কোম্পানিটির মুনাফা প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছে।

বহুজাতিক তকমার আরেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন লিমিটেড। একমাত্র তালিকাভুক্ত সেলফোন অপারেটর কোম্পানিটির ইপিএস কিছুটা কমেছে। গত দেড় মাসে এর শেয়ারদর ২৭০ থেকে ২৪০ টাকার ঘরে নেমে এসেছে।

আলোচ্য সময়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ দর হারিয়েছে সিমেন্ট খাতের দুই বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। ২০১৫ সালে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট মুনাফা প্রবৃদ্ধি ধরে রাখলেও আগের বছরের তুলনায় কমেছে লাফার্জ সুরমার মুনাফা। গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মুনাফা ২০১৫ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে শেয়ারদর কমেছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ কোম্পানিরও।

ম্যারিকো বাংলাদেশ আগের হিসাব বছরে ৪২ টাকা ৬৯ পয়সা ইপিএস দেখায়। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে তা ৩৭ টাকা ছাড়িয়েছে। এ কোম্পানির শেয়ারদর গত অক্টোবর থেকে টানা কমছে। ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার ঘরে নেমে এসেছে শেয়ারের দর।